স্টাফ রিপোর্টার, ভূরুঙ্গামারীঃ
দূর্নীতির বেড়াজালে পড়ে নুয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস যেন দূনীর্তি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। উপজেলা প্রাাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভাঃপ্রাঃ) মোহসিন আলীর অনিয়ম ও দূর্নীতির কারনে হয়রানীর শিকার হচ্ছে শিক্ষকরা। সম্প্রতি ডিপিএড প্রশিক্ষনের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১ জন শিক্ষকের নিকট থেকে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ওই শিক্ষা অফিসারে বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক শিক্ষকের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করা হয়েছে এবং অনতিবিলম্বে দূর্নীতিবাজ উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাকে অপসারন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোড় দাবী জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উৎকোচের বিনিময়ে শিক্ষকদের বার্ষিক বর্ধিত বেতন সঠিক সময়ে না দিয়ে কৌশলে বকেয়া বিল করে প্রদান করে। টাইম স্কেল, জিপিএফ ঋন, অফেরতযোগ্য ঋন, শেষ জিপি-এর ঋণ অবসর প্রস্তুতির ছুটি মঞ্জুরী, গ্রাইচ্যুটি বিল, মাতৃত্ব ছুটি মঞ্জুরী ও বিল, লামগ্রান্ড বিল, সি ইন এড ও ডেপুটেশন গন্যকরন, বই পরিবহন বিল, ক্ষুদ্র মেরামত বিল প্রদানে নানা প্রকার জটিলতা সৃষ্টি করে নগদ টাকা বিভিন্ন হারে ঘুষ গ্রহন করে। উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভূয়া তথ্যের মাধ্যমে অনুমোদিত পদ ও সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষক কর্মরত রাখা। স্কুল কন্টিজেন্সী বরাদ্দের চাহিদা যথাসময়ে প্রণয়ন না করা এবং স্লিপ‘র অর্থে ক্রয়কৃত শিক্ষা উপকরন ও আলমারীর বিলে যথাযথ ভ্যাট ও আয়কর কর্তন না করার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া নতুন জাতীযকরনকৃত শিক্ষকদের বাধ্য করে যোগদান উপলক্ষে ৩৮ জন শিক্ষকের নিকট থেকে ৮৩ হাজার টাকা, স্লিপ কার্যক্রমে ফাইল প্রস্তুতের কথা বলে ১১১টি বিদ্যালয়ে বরাবদ্দকৃত ৪০ হাজার টাকা থেকে ২৩ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন। ক্ষুদ্র মেরামতের কাজে বিদ্যালয় প্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা, টয়লেট মেরামতে কাজে ১৯ হাজার টাকার মধ্যে ২/৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উৎকোচ না দেয়ায় সদ্য পিআরএল এ যাওয়া ২নং চরধাউরারকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নুরজাহান খাতুন এর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার এর মুখের উপর কাগজ ছুড়ে মেরে অফিস থেকে বের করে দেয়া সহ তার নৈতিক ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের কারনে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শিক্ষা অফিসার মোহসিন আলী সহকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে অত্র উপজেলায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব গ্রহন করে নিজের সংসার মনে করে অত্র উপজেলায় কর্মরত আছেন। এ কারনে তিনি কাউকে তোয়াক্কা না করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। সপ্তাহে ৪ দিন অফিস করলেও তিনি এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে তাকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায় না। তার এ অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাহারুল ইসলাম জানান, অভিযোগ প্রমানিত হলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে তিনি শিক্ষকদের মানসম্মত শিক্ষা দানের বিষয়ে যতœবান হওয়ার পরামর্শ দেন।
উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার শিক্ষা (ভারপ্রাপ্ত) মোহসিন আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।