খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চালু করা হয়েছিল দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় পাকেরহাট গণগ্রন্থাগার। গণগ্রন্থাগারের উদ্যোক্তারা শুধু বই পড়ায় মানুষের উদ্বুদ্ধ করার কাজেই নিয়োজিত থাকেননি। ধীরে ধীরে এর কাজের পরিধি বেড়েছে। তারা রক্তদান, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা, বৃক্ষরোপণ, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা জনসেবামূলক কাজে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের এই কাজের কারণে উপকৃত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। আলোকিত হয়েছে পুরো উপজেলা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই জনকল্যাণমূলক গণগ্রন্থাগারটি ১৯৯৩ সালে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ধান হাটি মাঠে সেই সময়ের যুব সমাজের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকেরহাট গণগ্রন্থাগার। যা পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাধ্যমে উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সেই সময়ের যুব সমাজের উদ্যোক্তারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে পেশাগত চাপের কারণে ২০০৬ সালে এটি কালের বিবর্তনে বন্ধ হয়ে যায়। হারিয়ে যায় সে সময়ের স্থাপনা ও বই। ফলে ১১ বছর পর ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন স্বপ্নবাজ তরুণ ও স্থানীয় সংবাদকর্মীদের প্রচেষ্টায় এই গণগ্রন্থাগারটি পুনরায়  আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে একটি পুরাতন টিনশেড ভবনে নতুন করে যাত্রা শুরু করে। এখানে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, শিশু কিশোরদের বই থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, বিনোদন, ধর্মীয়, রাজনীতি, অর্থনীতি, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রচনা সমগ্র, জীবনী, ছোট গল্প, কবিতাসহ হাজার হাজার বই রয়েছে। পছন্দের বই সহজে খুঁজে পেতে ক্যাটাগরি অনুযায়ী আলাদা আলাদা বুক সেলফে সাজানো হয়েছে এ সকল বই। যেগুলো উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পেয়েছে গণগ্রন্থাগার। এখানে প্রতিদিন স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকরি প্রত্যাশী যুবক-যুবতীসহ অনেক মানুষই জ্ঞান অন্বেষণ করতে আসেন এখানে। এই গণগ্রন্থাগারে বই পড়েই অনেক যেমন জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন তেমনি অনেকে এখন সরকারী-বেসরকারী চাকরি করছেন। এখানে নতুন সদস্য হয়ে নাম নিবন্ধন করে বাড়িতে নিয়ে গিয়েও বই পড়ার সুযোগ রয়েছে। এরপর সেই গণগ্রন্থাগারটি ২০২১ সালে সরকারী রেজিষ্ট্রিভুক্ত করে ৪১ সদস্যের একটি পরিচালনা কমিটি ও ৭ সদস্যের একটি রক্তদান কর্মসূচির উপকমিটি গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রামের অবহেলিত শিক্ষার্থী ও লোকজনকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার চিন্তা থেকে এই গণগ্রন্থাগারটি নতুন করে যাত্রা শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমে প্রসারিত হয়। গণগ্রন্থাগারের  উদ্যোক্তারা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, স্কুল-কলেজে কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সংবর্ধনা প্রদান, জাতীয় দিবস পালন, খেলাধুলা ও শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছেন। এ ধরনের শিক্ষামূলক কর্মসূচির কারণে এলাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। ঝরে পড়ার সংখ্যা কমেছে। তাদের এই কার্যক্রমে এলাকার মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তবে এই গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান সেবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে আসছে। এসব সেবার মাধ্যমে গণগ্রন্থাগারটি খানসামা উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। 

বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের উত্তর পার্শ্বে গণগ্রন্থাগারের টিনশেড কার্যালয়ের সামনে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। একজন একজন করে যাচ্ছে আর গণগ্রন্থাগারের সভাপতি রাশেদ মিলনের উদ্যোগে এবং ইপিলিয়ন ফাউন্ডেশন ও পাকেরহাট গণগ্রন্থাগারের সহযোগিতায় এক হাজার দরিদ্র শীতার্ত পরিবারের মাঝে সম্প্রীতির উষ্ণতা হিসেবে একটি করে কম্বল তুলে দিচ্ছেন গণগ্রন্থাগারের নেতৃবৃন্দ। আর গণগ্রন্থাগারের ঘরের ভিতর গিয়ে দেখা যায়, টেবিল-চেয়ারে বসে বই পড়ছেন পাঠকরা আবার কেউবা পত্রিকা পড়ছেন। আর হাজার হাজার বই সেলফে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে।  

পাকেরহাট গণগ্রন্থাগারের সভাপতি রাশেদ মিলন বলেন, পাকেরহাট গণগ্রন্থাগার ২০১৭ সালে পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর অনেক চড়াই-উত্তরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে। পাঠকদের নিয়েই গ্রন্থাগারের মূল কাজ পরিচালিত হয়। এছাড়াও শিক্ষা, সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলা, সামাজিক সংস্কারসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকেরহাট গণগ্রন্থাগার কাজ করে চলছে। গ্রন্থাগারের প্রাণ হচ্ছে তাঁর পাঠক। পাকেরহাট গণগ্রন্থাগারের সকল কার্যক্রমে পাঠক এবং গ্রন্থাগারের শুভাকাঙ্ক্ষী, বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমাদের সহযোগীতা করে থাকেন। পাঠকদের জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি গরীব ও দুস্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন মানবসেবা কাজ করে যাচ্ছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *