লালমনিরহাট প্রতিনিধি ॥
লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত পল্লী এলাকার খুনিয়াগাছ ছেকনাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক সিএইচসিপি শরিফুল ইসলাম সুজনের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি, মাসের পর মাস ক্লিনিক বন্ধ, সরকারের বরাদ্দকৃত ২৭ প্রকার ঔষধ সহ সেবা বঞ্চিত স্থানীয় মানুষ। হতদরিদ্রদের সরকারি ওষুধগুলো বিক্রি করে সিএইচসিপি’র বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ উঠেছে। যা কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকার সব বয়সের মানুষের মাঝে সমালোচনা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ছেকনাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি শরিফুল ইসলাম সুজন জেলার আদিতমারী উপজেলার খাতাপাড়া মাজার এলাকার গিয়াস উদ্দিনের পুত্র।
জানা গেছে, ২০০১ সালে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ছেকনাপাড়া এলাকার হতদরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা জন্য ছেকনাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয়। এ ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপি শরিফুল ইসলাম সুজন, স্বাস্থ্য সহকারী খাইরুল ইসলাম তোকদার ও এফডাব্লু পদে সিন্দু রাণী যোগদান করেন। ক্লিনিকটি সপ্তাহে ৬দিন, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত একজন সিএইচসিপি, একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন এফডাব্লু দায়িত্ব পালন করা কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নিয়মিত কর্তব্যে অবহেলা, মাসের পর মাস ক্লিনিক বন্ধ। আবার মাসে ২/৩ দিন ক্লিনিক খোলা রাখলেও তিনজনেই ক্লিনিক ছাড়েন নির্ধারিত সময়ের আগে। ফলে সরকারের কাঙ্খিত গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। এ ক্লিনিকে হতদরিদ্র মানুষগুলো সেবা নিতে এসে বার বার ফিরত যাচ্ছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সুত্র জানান, সরকার ২ মাসের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৭ প্রকার ঔষধ দেওয়া হয়। ঔষধগুলো হল, ট্যাবলেট এন্টাসিড ৬৫০ মিলি গ্রাম-৩,০০০ তিন কার্টুন। ট্যাবলেট প্যারাসিটামল ৫০০ মিলি গ্রাম-৩,০০০ ছয় বক্স। ট্যাবলেট কোরামফেনিরামিন ৪ মিলি গ্রাম-১,৫০০ তিন বক্স। ট্যাবলেট মেট্রোনিডাজল ৪০০ মিলি গ্রাম-৭৫০ তিন বক্স। ট্যাবলেট ফিরাস ফিউমারেট এন্ড ফলিক এসিড-৩,০০০ তিন বক্স। ট্যাবলেট ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট ৩০০ মিলি গ্রাম-১,৫০০ তিন বক্স। ট্যাবলেট ভিটামিন বি কমপ্লেক্স- ৩,০০০ ছয় বক্স। ট্যাবলেট এ্যালবেন্ডাজল ৪০০ মিলি গ্রাম- ১২০ এক বক্স। ট্যাবলেট জিংক ডিসপারসিবল ২০ মিলি গ্রাম-৫০০ এক বক্স। ট্যাবলেট সালবিটামল ২ মিলি গ্রাম-০৫০০ এক বক্স। ট্যাবলেট কো-ট্রাইমোক্সাজল ১২০ মিলি গ্রাম-৫০০ এক বক্স। ট্যাবলেট কো-ট্রাইমোক্সাজল ৯৬০ মিলি গ্রাম-৫০০ এক বক্স। ট্যাবলেট পেনিসিলিন ভি ২৫০ মিলি গ্রাম-১০০ এক বক্স। ট্যাবলেট হাইওসিন বিউটাইল ব্রমাইড ১০ মিলি গ্রাম-৫০ এক বক্স। ক্যাপসুল এ্যামোক্সাসিলিন ২৫০ মিলি গ্রাম-৫০০ এক বক্স। ক্যাপসুল ভিটামিন এ-২,০০,০০০ আই ইউ-২০ এক বক্স। সিরাপ এ্যামোক্সাসিলিন ড্রাই ১০০ মিঃ লিঃ ১২ এক কার্টুন। সিরাপ প্যারাসিটামল ৬০ মিঃ লিঃ-৬০ দুই কার্টুন। সিরাপ কোরামফেনিরামিন ৬০ মিঃ লিঃ ২৪ এক কার্টুন। সিরাপ সালবিটামল ৬০ মিঃ লিঃ ২৪ এক কার্টুন। সিরাপ এ্যামোক্সাসিলিন পেঃ ড্রাপ ১৫ মিঃ লিঃ ১০ এক কার্টুন। বেনজাইল বেনজোয়েট অ্যাপি¬কেশন ১০০ মিঃ লিঃ ৬ এক কার্টুন। কোরাম ফেনিকল আই ড্রপ ০.৫%, ১০ মিঃ লিঃ ২৪ দুই বক্স। জেনসন ভায়োলেট ২%, ১০ মিঃ লিঃ ১০ দুই বক্স। বেনজাইল এন্ড সেলিসাইলিক এসিড ১ কেজি এক টা। নিউমাইসিন অয়েন্টমেন্ট-১০ গ্রাম এক বক্স। ও আর এস-৪৪০ দুই কার্টুন। ক্লিনিক বন্ধ থাকায় প্রত্যন্ত পল্লী এলাকার মানুষ ২৭ প্রকার ওষুধ সহ সেবা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাহলে এসব ঔষধ যাচ্ছে কোথায়।
সেবা বঞ্চিত ছেকনাপাড়ার বাসিন্দা এরশাদ (৪২) ও সবুজ (৫০) জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক নামে মাত্র এখানে আছে। সব সময় এ ক্লিনিকটির দরজা বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে ক্লিনিকের দরজা খোলা হলেও ঔষধ মিলে না। সিএইচসিপি সুজনের শ্বশÍর বাড়ি ক্লিনিকের পাশে। সেই দাপটে চলে ক্লিনিক ফাঁকি। সুজন একজন মাদকাসক্ত। সাধারণ মানুষকে ঔষধ না দিয়ে বাহিরে বিক্রি করে। তাছাড়া এলাকার অনেক মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আর অফিস আসছেন না।
ছেকনাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী খাইরুল ইসলাম তোকদার বলেন, ক্লিনিকের চাবি থাকে সিএইচসিপি সুজনের কাছে। তিনি অফিস না আসলে আমার কি করার আছে। তিনি ওই এলাকার জামাই এ সুবাদে অনেক লোকের নিকট টাকা নিয়েছেন। সেই পাওনাদ্বারদের ভয়ে অফিস আসেন না।
ছেকনাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক সিএইচসিপি শরিফুল ইসলাম সুজন বলেন, মাদক সেবনের বিষয়টি আমার একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তাছাড়া আমি আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।
ছেকনাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক সিএইচসিপি শরিফুল ইসলাম সুজনের মাদক সেবনের বিষয়টি শুনেছি কিন্তু দেখিনি স্বীকার করে খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ক্লিনিক পরিদর্শন গিয়ে সমস্যা পেয়েছি। ওই ক্লিনিকের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলা, ক্লিনিক বন্ধ রাখার বিষয়টি বার বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার তিনি নিবেন।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ দীপংকর রায় বলেন, ছেকনাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা কি আর বলব। তাদের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরে অনেক অভিযোগ। আমি ২৬ জানুয়ারী নিজেই ক্লিনিক পরিদর্শনে গিয়ে কাউকে পাইনি। তাই তাদের তিনজনকে শোকজ করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষকে ঔষধ না দিয়ে বাহিরে বিক্রি ও ক্লিনিকের সিএইচসিপি’র মাদকসেবনের বিষয়ে উপজেলা কর্মকর্তা আরোও বলেন, একজন মাদক সেবনকারীর দ্বারায় সবকাজেই সম্ভব। সরকারি ঔষধ বাহিরে বিক্রি ও মাদকসেবনের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।