মোঃ আশতাব হোসেন
ছোট বেলায় দাদা দাদী, নানা নানী ও তাদের মতো মুরুব্বীদের মুখে শুনেছি, তারা বলতেন অনেক দিন আগের কথা, আমাদের মুরুব্বীগণের মুখে শুনেছি ঐ ভইষকুড়ি বিলের নানাহ কাহিনী। ওখানে একটা খালি নিচু বিশাল মাঠ ছিলো। আশে পাশের এলাকা ছিলো অনেকখানি উচু ভূমি। সেকালে মানুষজন খুব কম ছিলো তাই অনেক যায়গা মাঠের পর মাঠ খালি পড়ে থাকতো। তাতে বন- জঙ্গল ও ঘাস হতো শুধু। সেসব মাঠে গরু,মহিষ চরে ঘাস খেতো । ছাগল,ভেড়া ঐ নিচু এলাকাটিতে যেতোনা। সেখানে অনেক বড় বড় শেয়ালএবং বাঘও বাস করতো। দিনের বেলাতেই দূর থেকে ছাগল,ভেড়া ধরে এনে সেখানে মজা করে খেয়ে ফেলতো! বর্ষাকালে এলাকার সব পানি নেমে এসে ঐ নিচু মাঠে জমা হয়ে প্রায় হা্ঁটু থেকে বুক পানি পর্যন্ত হতো। আবার কিছু দিন পরে শুকিয়ে যেত। অনেক ঘাস ও গাছপালা কয়েক দিনের পানিতে নষ্ট হতোনা। পানি নেমে গেলে সেগুলি আরো তরতাজা হয়ে উঠতো। মহিষগুলো পানিতে নেমেই ঘাস পাতা খেত, কিছু কিছু গরুও হাঁটু পানি যেখান দিয়ে সেসব যায়গাতে নেমে ঘাস খেত। কিন্তু মহিষ গরম সহ্য করতে পারেনা।শীতকালেও ওদের গরম লাগে। বেশি গরম পড়লে পানিতেই ডুবে থাকে এবং উঠতেই চায়না। তখন গেরস্থের বাড়িতেই অনেক গবাদিপশু ছিলো। যারা ধনী তাদের গরু মহিষের বিশার পাল ছিলো। এক একটা পালে ৩ থেকে ৪ শত গরু বা মহিষ ছিলো। চর অঞ্চলগুলোতে হাজার হাজার গরু বা মহিষ থাকলে সেটাকে বলা হতো বাতান। এসব গবাদিপশু দলবদ্ধ ভাবে চলা ফেরা বা মাঠে চরে বেড়াতো। অনেক অঞ্চলে মহিষকে বলা হয় ভইষ। এবার ভইষের কথাই শোনা যাক। সেই নিচু মাঠে বর্ষাকালের কোনো এক সকালবেলা এক গেরস্থের রাখাল বিশটি ভইষ প্রতিদিনের মতো সেই মাঠে চরাতে যায়, ভইষগুলি খুব মজা করে ঘাস খাওয়া শুরু করে দেয়, পেট একবার ভরে যাওয়ার পরে যেখানে পানি জমা দেখে সেখানে গিয়ে শুয়ে গড়াগড়ি করে গরম তাড়ায়। এদিকে আকাশ কালো হয়ে যাচ্ছে, রাখাল মনে করে বৃষ্টি হয়তো আজ বেশি হতে পারে। যখন সূর্য্য মাথার উপরে এমন সময় হবে আর কি। তবে মেঘে সূর্য্য ঢেকে গেছে আকাশটা যেনো অনেক নিচে মনে হচ্ছে, শুরু হয়ে গেছে দখিনা বাতাস! বাতের সাথে কিছু কিছু বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। রাখাল মাঠের পাশ থেকে নিরাপদে চলে যায়,বৃষ্টি পেলে ভইষ আরও মজা পায়। সব ভইষ বিশ্রাম থেকে উঠে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খুব মজা করে আবার ঘাস খাওয়া শুরু করে। বৃষ্টি কারে কয় যেনো আকাশটা ভেঙ্গে বন্যার প্রবল স্রোতের মতো গড়িয়ে পড়ছে! আশে পাশের উচু ভূমির পানিগুলিও সব বন্যার স্রোতের মতো নেমে আসছে। চার দিকের পানি সব একযোগে নামছে নিচু মাঠটিতে! ঝড়ের গতিও গেছে বেড়ে। বাহিরে কোনো জনমানব নেই সবাই নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে! চারদিকের পানির বেগ একত্রিত হয়ে গোলাকার এক বিশাল বৃত্তাকারে ঘুরা শুরু করে আশে পাশের বাড়ি ঘর থেকে উঁকিঝুকি দিয়ে পানির বিশাল এক বৃত্ত যা গাড়ির চাকার মতো ঘুরছে। ভইষগুলি আর দেখতে পাচ্ছেনা। এর পর বৃষ্টি আর ঝড় শেষ হলে লোকজন এসে দেখে বিশাল এক বিল তাতে শুধু পানি আর পানি ঘুরছে। সেখানে বিশটি ভইষ সহ গাছপালা সব নিচের দিকে ডেবে গেছে! সেই থেকে বিলটির নাম হয় ভইষকুড়ি! চলবে —