শৈলেন্দ্র নাথ পোদ্দার।
ফুল নেবে গো বাবু সাহেব
নিন না একটি ফুল।
পিছন ফিরে দেখি সে কি
নয় তো চোখের ভুল!
বছর ছয়েক বয়েস তাহার
ছিন্ন মলিন বেশ।
চোখ দুটি তার মায়ায় ভরা
রুক্ষ মাথার কেশ।
গন্ডা পাঁচেক রক্ত গোলাপ
ধরা দু’টি হাত।
ক’দিন গেছে অনাহারে
জোটেনি তায় ভাত।
কী সকরুণ মিনতি তার
নয়ন ভরা আশ।
ফুলগুলি বিকিয়ে তবে
ভাঙবে উপবাস।
ফুটফুটে তার তুলতুলে গাল
ফুলের মত লাল।
রোদে পুড়ে হইছে যেন
নিতান্ত বেহাল।
ঠিক যেন মোর নয়ন মনি
আমার সোনার চাঁদ।
দেখতে যেন একই রকম
নিখুঁত আর নিখাঁদ।
চিকন চাকন মুখের গড়ন
গোলাপি দুই ঠোঁট।
এমন কি হয় দুই এর মিলন
লাগল মনে চোট।
কাজের শেষে ফিরলে বাড়ি
বাড়িয়ে দুই হাত।
বুকের সাথে বুক জড়িয়ে
থাকত সারা রাত।
মনে পড়ে সেদিন ছিলো
মধুর ফাগুন মাস।
নেমে এলো তার জীবনে
কঠিন সর্বনাশ।
কে জানিতো এই অবেলায়
আসবে নিঠুর সাঁঝ।
বিনা মেঘে আকাশ ভেঙে
পড়বে হঠাৎ বাজ।
নিভে গেলো চোখের আলো
আমার বুকের শ্বাস।
সেই শোকেতে জননী তার
নিল স্বর্গবাস।
সইতে আমি পারিনি যে
সেই বেদনার ভার।
নিঃস্ব হলেম বিশ্ব মাঝে
ঘর করিনি আর।
আজ ছিলো তার জন্ম তিথি
ঠিক ছ’বছর পর।
ফুলগুলি সব কিনে নিলাম
করিনি দাম দর।
ক্ষণিক তারে জড়িয়ে বুকে
পেলাম সেই সে ঘ্রাণ।
আঁখ-নদীতে অশ্রু জলের
জাগল বুঝি প্রাণ।
স্নেহের প্রদীপ নেভে না তো
জ্বলে নিরন্তর।
সারা জীবন জ্বালিয়ে রাখে
মানুষের অন্তর।
হায়রে অবুঝ মানব হৃদয়
লয় না পরাজয়।
যায় না যারে ফিরে পাওয়া
তার তরে হয় লয়।