কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ত্যাগী নেতা আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান বীরবল ‘বীরবল স্যার’ নামেই বেশি পরিচিত সুধিমহলে। একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ। আওয়ামী রাজনীতি করেই জীবনটা পারি দিচ্ছেন ছাত্রকালীন সময় থেকে। এ রাজনীতি কইে ব্যাপক পরিচিতি ও সুনাম অর্জন করে সবার অন্তরে রয়েছেন বীরবল স্যার হিসেবে। শুধু রাজনীতি নয় একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবেও তার পরিচিতি আনাচে কানাচে। রয়েছে অনেক ছাত্রছাত্রী। এক কথায় সকলের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নেয়া একজন সফল ব্যক্তিত্ব তিনি। বহু ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন প্রতিটি মানুষের অন্তরে। রাজনৈতিক জীবনেও গেছে অনেক ধকল। সইতে হয়েছে কারাবরণও। তারপরও ছেড়ে দেননি আওয়ামী লীগের নৌকার হাল। সে প্রেক্ষিতেই কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী) আসনে নির্বাচন করে নৌকার হাল ধরেই মানুষের কল্যাণে কাজ করে বাকী জীবন কাটাতে চান তিনি। শিক্ষা জীবনে তৎকালীন বি,এ পাস, বিপিএড পাস করা এই ত্যাগী প্রবীণ নেতা ১৯৬৬ হতে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলা শাখা কৃষক লীগ এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন নিষ্ঠার সাথে। আর সেই থেকেই মিটিং এ অংশগ্রহণ করেন এবং রামখানা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়ে দলের কার্যক্রম চালিয়ে যান। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে মরহুম এম,এন,এ মোজাহার হোসেন চৌধুরী (নাগেশ্বরী) ও এম,পি শামসুল হক চৌধুরী (ভূরুঙ্গামারী) সাহেবের নৌকা মার্কা প্রচার মিছিল, সমাবেশ, খুলি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন জয়লাভ করতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মোতাবেক গণ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং ভারতে চৌধুরী হাট শিবির স্থাপন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর স্মরণার্থী পুনর্বাসনে। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্টের পর আওয়ামীলীগের অনেক নেতৃবৃন্দ গা ঢাকা দিলেও মরহুম মোজাহার হোসেন ছৌদুরী সাহেবের নেতৃত্বে নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী থানায় আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করার কাজে ছুটে বেড়ান বুক ফুলিয়ে। নাগেশ্বরী থানায় গুটি কয়েক ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগকে সাথে নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবীতে রাজপথে মিছিল করে সাহসীকতার পরিচয় দেন। যে কারণে পরদিনই তাকে থানায় আটকে রেখে রাত ১০ টায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এমনকি ১৫ আগষ্ট তিনি সর্বপ্রথম তার বাসায় বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া খায়ের ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। এছাড়াও এই ত্যাগী নেতা জোহরা তাজ উদ্দিন, সাজেদা চৌধুরী আব্দুল মালেক উকিলের নেতৃত্বে কুড়িগ্রাম জেলার এ্যাডভোকেট আমান উল্যাহ ও এ্যাডভোকেট নজির হোসেনের নির্দেশে জাতীয় কমিটির সদস্য হিসেবে কুড়িগ্রাম জেলার প্রতিনিধিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিটি মিটিং ও মিছলে অংশগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক জীবনে ১৯৮৬ সালে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে কুড়িগ্রাম-১ আসনের ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের নৌকা মার্কা প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচন করেন। স্বৈরাচারী এরশাদের ভোট ডাকাতির কাণে পরাজিত হন তিনি। ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রবীণ নেতা শামসুল হক চৌধুরী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং নাগেশ্বরী উপজেলায় ডাক্তার মরহুম ওয়াসেক আহমেদ (শিল্পপতি গোলাম মোস্তফার পিতা) আওয়ামীলীগের মূল দল বাদ দিয়ে মিজান লীগে যোগদান করে নির্বাচন করেন। পরবর্তীতে গণফোরাম-এ যোগদান করলে আওয়ামীলীগ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন ভূরুঙ্গামারী উপজেলার মরহুম ফজলার রহমান ও এছাহাক আলী ব্যাপারীর সহযোগীতায় আওয়ামীলীগকে জোরদার করার জন্য মাঠে ময়দানে ছুটে বেড়ান মজিবুর রহমান বীরবল। সে সময় নাগেশ্বরীর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও রাসেল স্মৃতি সংসদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন করেন এবং আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করেন। শুধু তাই নয় ১৯৮৭ সালে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির নির্দেশে নাগেশ্বরী ভূরুঙ্গামারী এলাকায় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে উপজেলা ঘেরাও করতে গিয়ে গ্রেফতার হন এই ত্যাগী নেতা। এক বছর কারাবরণ করেও ২২ দিন কনডেম সেলে অবস্থান করতে হয় তার। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কৃষকদের ঋণ মওকুফের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেন বীরবল স্যার এবং জনসমর্থন বৃদ্ধি করেন। ১৯৯১ সালে তিনি মনোনয়ন চাইলেও জনসমর্থন থাকার পরেও আব্দুস সবুর হীরু চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারপর মনোনয়ন চাইলে তাকে প্রতিবারই বিভিন্ন কারণে তার মনোনয়ন হাত ছাড়া হয়। এভাবে রাজনীতির পিছনে নিজেকে ক্ষয় করে প্রতিবারই নৌকা মার্কায় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করলেও মনোনয়ন না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। প্রবীণ এই নেতা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামীলীগের হাতকে শক্তিশালী করতে চান বলে তিনি জানান। বর্তমানে তিনি নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অংশগ্রহণ করছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। যদি তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন তাহলে নাগেশ্বরী ভূরুঙ্গামারী দুই উপজেলার উন্নয়ন ও মানুষের পাশে থাকতে চান তিনি।