কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টরের অধীনে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও কুড়িগামের লালমিয়া মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। না পাওযার বেদনা নিয়ে তিনি পরপারে চলে গেলেও তার সন্তানরা এখনও ধর্ণা দিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাবার স্বীকৃতির আশায়।
জানা যায়,কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ী পাঠানপাড়া গ্রামের মৃত শহর উদ্দিনের পুত্র লাল মিয়া ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টরের অধীনে সুবেদার আরব আলী সাহেবের কোম্পানীতে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধেও তিনি অংশ নেন। দেশ স্বাধীনের পর সহায় সম্বলহীন হয়ে অভাবের তাড়নায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়ান
এবং অনত্র পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। এজন্য তার মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র নেয়াসম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২০০০ সালের দিকে কুড়িগ্রামে ফিরে এলে তখন থেকেই মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র সংগ্রহের জন্য জেলা ইউনিট কমান্ড, উপজেলা কমান্ডারদের কাছে শিক্ষা বঞ্চিত লাল মিয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রের জন্য ধরনা দিয়েও তা পাননি। এ বেদনা নিয়ে তিনি গত ২০১১ সালে পরপারে চলে গেছেন। এরপর থেকে তার পুত্র রাজু আহমেদ ও আফজাল আহমেদ বাবার শেষ ইচ্ছা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃত আদায়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনে কয়েক দফা দরখাস্ত দেন-দরবার করেও কাজে আসেনি। এদিকে ৬নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ও বীরপ্রতীক মোঃ আব্দুল হাই সরকার জানান, মৃত লাল মিয়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টরের অধীনে সুবেদার আরব আলী সাহেবের কোম্পানীতে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। যা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অপরদিকে কুড়িগ্রাম সদর কমান্ডের সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: আফজাল হোসেন জানান, ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি যখন সাহেবগঞ্জ ভারত সেক্টর হেড কোয়াটারে অবস্থান করি তখন উক্ত মৃত লাল মিয়া সেখানে ছিলেন পরে ইপিআর সুবেদার আরব আলী সাহেবের কোম্পানীতে থেকে ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় কয়েকটি সশস্ত্র যুদ্ধে সে এবং আমি সশরীরে অংশগ্রহণ করি। একই কথা জানালেন কুড়িগ্রাম পুরাতন স্টেশন পাড়ার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ হানিফ উদ্দিন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুড়িগ্রাম সদর কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আব্দুল বাতেন জানান, সরকার বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে তালিকা ভূক্ত করার জন্য অনলাইনে দরখাস্ত গ্রহণ করে যাচাই বাছাইও সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, এবারে তিনি তালিকাভুক্ত হবেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুড়িগ্রাম জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম টুকু জানান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে লাল মিয়া আমাদের সাথে থেকে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না-বান্না ও খাওয়ার বিষয়টি তিনি দেখাশুনা করতেন। দীর্ঘদিন তিনি আমাদের সাথে ছিলেন। তারপর আমি হায়ার ট্রেনিংয়ে গিয়ে যখন সেক্টর পরিবর্তন হলো এবং ৬নং সেক্টর দিনাজপুরে গেলাম তারপরে আর তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি। তবে স্বাধীনতার পর আবার আমাদের রংপুর মেডিকেল কলেজে দেখা হয়েছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ছিল এবং সবসময় রান্না-বান্না করতো ও মুক্তিযোদ্ধাদের সব ধরনের সাহায্য করতো। তিনি অসচেতনতার
কারণে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আসতে পারেননি। তবে ২০১৭ সালে আবার যখন মুক্তিযোদ্ধা যাছাই-বাছাই শুরু হয় তখন প্রথম যাছাই বাছাইয়ে তিনি ক শাখায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এখন শুধু অপেক্ষা যে, গেজেট হয়ে আসলে তার পরিবার যেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সুযোগ সুবিধা পায় এই দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। মৃত লাল মিয়ার পুত্র চ্যানেল আইন কুড়িগ্রাম প্রতিনিধির ক্যামেরা পার্সন রাজু আহমেদ বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি। এমনকি তার সাথী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছেও গল্প শুনেছি। বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহায্য পাওয়া নয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া, তিনি এ বেদনা নিয়েই পরকালে চলে গেছেন। আমি তার সন্তান হিসেবে সরকারের কাছে দাবী করছি আমার বাবা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয় তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধার
তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *