ঢাকা অফিসঃ
একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভূখন্ডের জন্য এ জনপদের মানুষ বারবার অকাতরে প্রাণ দিয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, যুগে যুগে সামরিক-বেসামরিক ছদ্মবেশে স্বৈরাচারীরা ক্ষমতা দখল করেছে। জনগণ প্রতিবাদ করলে জুটেছে বেয়নেট, বুট, গুলি, টিয়ারশেল। তবে ছাত্ররা প্রথম থেকেই এরশাদের শাসনক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন। শুরু হয় প্রতিরোধ আন্দোলন। স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্রদের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রথম শহীদের নাম জয়নাল দিপালী কাঞ্চন। এরপর থেকেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, পশ্চিম থেকে আগত ভ্যালেন্টাইনের জোয়ারে ভেসে গেছে রক্তের অক্ষরে লেখা, এ প্রজন্ম ভুলে যাচ্ছে সেই সব শহীদের নাম।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনস্থ যাদু মিয়া মিলনায়তনে ‘’১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে’ বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র কেন্দ্র আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এ কথা বলেন।

জাতীয় ছাত্র কেন্দ্রের সমন্বয়কারী সোলায়মান সোহেলের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ন্যাপ যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ শাহজাহান সাজু, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব মোঃ শহীদুননবী ডাবলু, বক্তব্য রাখেন ছাত্র কেন্দ্রের যুগ্ম সমন্বয়কারী আলী নূর নাদিম, স্বরজিৎ কুমার দ্বেব, গোলাম মোস্তাকিন ভুইয়া, নির্বাহী সদস্য আবুল হোসেন, সীমা আক্তার প্রমুখ।
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, আন্দোলনের প্রায় তিন যুগ পার হতে না-হতেই জনগণের কাছে বিস্মৃতি হতে চলেছে জয়নাল-দিপালীদের নাম। ব্যক্তির ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে স্বৈরাচার-প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দিনটিতে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ স্বৈরাচার-প্রতিরোধ দিবস হিসেবেই পালন করে আসছিল। নব্বই-পরবর্তী মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রবল জোয়ারে দিন পরিণত হয়েছে বহুজাতিক কম্পানির পণ্য বিক্রির দিন হিসেবে। রক্তের অক্ষরে যাঁরা আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন, তাঁদের জন্য অবহেলা ছাড়া আমরা কিছুই দিতে পারিনি। এ দিনটিতে তাদের স্মরণ না করে সে জায়গায় ভালোবাসা দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ে আসা খুব দুর্ভাগ্যজনক ও কলঙ্কজনক।
তিনি বলেন, ভালবাসা দিবস নাম বেদেশী সংস্কৃতি আমদানিকারী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা যখন নীতিবাক্য বলেন, তখন মনে হয় জাতি হিসাবে আমরা কতটুকু ব্যর্থ। আমাদের রাজনীতিবিদরা কতটুকু স্বার্থপর।

এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া আরো বলেন, ভালোবাসা আমাদের জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের মতো দেশে যেখানে আধা সামন্তীয় সংস্কৃতি বিদ্যমান সেখানে যখন ভালোবাসা দিবসকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে সংস্থাপনের চেষ্টা চলে তখন তা সত্যিই ভাবিয়ে তোলে। এগুলো আমাদের ছাত্র, যুবক ও মেহনিত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বিদ্যমান শোষণমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে অন্ধ-বধির-মূক করে রেখে ‘আমি-তুমি’র আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থসর্বস্ব সম্পর্কে বেঁধে রাখার পাঁয়তারা মাত্র। প্রতিবাদের ভাষা ও অর্জনগুলো বিস্মৃত করার কৌশল।
সভাপতির বক্তব্যে সোলায়মান সোহেল বলেন, যৌবনই হলো প্রেম ও বিদ্রোহের শ্রেষ্ঠ জন্মভূমি। প্রেম থেকে সংগ্রামটুকু বাদ দিলে যৌবন আর যৌবন থাকে না। তাতে মুক্তি নেই। যখন চারদিকে শোষণ-নিপীড়ন-পরাধীনতার নতুন কৌশল রচনা হচ্ছে তখন সংগ্রামের চেতনাকে ভুলিয়ে দিতে তৎপর আত্মকেন্দ্রিক প্রেমের এ সংস্কৃতি কখনো আমাদের কল্যাণ বয়ে আনবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন