ফারুক আহমেদ কলকাতা
তুমুল করতালির সাথে অগণিত সাহিত্য ইতিহাস বিজ্ঞান তাপসদের উপস্থিতিতে মুর্শিদাবাদ কলকাতা বাঁকুড়া মালদহ নদিয়া বীরভূম পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ ভারতের আসাম ছত্তিশগড় ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জ্ঞানীগুণী গবেষক ও বিদগ্ধ পত্রিকা সম্পাদকদের হাতে তুলে দেওয়া হল “সিসিএআই বাসভূমি জীবনকৃতি পুরস্কার”, “বাসভূমি সাহিত্য সম্মাননা” ও “বাসভূমি সেরা বাংলা লিটিল ম্যাগাজিন সম্মাননা ” আজ বহরমপুর রবীন্দ্র সদনের মঞ্চে। এই নিয়ে ষোলোবছর হয়ে গেল বাসভূমি পত্রিকা সম্পাদক অরূপ চন্দ্র’র উদ্যোগে প্রদত্ত এই পুরস্কার ও সম্মাননা অনুষ্ঠান।
২০২৩-সালের সিসিএআই-বাসভূমি জীবনকৃতি পুরস্কার” পেলেন পুরাতত্ত্ব গবেষক গোপাল লাহা (মালদহ), ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি গবেষক ড. স্বপন ঠাকুর (পূর্ব বর্ধমান), ইতিহাস গবেষক মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল (নদিয়া)।
“বাসভূমি সাহিত্য সম্মাননা” পেলেন বাঁকুড়ার প্রতিবাদী কবি বিষাণ রুদ্র, নদী ও মৎস্য বিজ্ঞানী ড. সূর্যেন্দু দে (মুর্শিদাবাদ), ও তৃতীয় ধারার ব্যাতিক্রমী নাট্যপরিচালক বহরমপুরের দীপক বিশ্বাস।
বাসভূমি “সেরা বাংলা লিটিল ম্যাগাজিন” সম্মাননা পেলেন ‘নতুন গতি’ পত্রিকা, সম্পাদক এমদাদুল হক নূর (কলকাতা); হাইলাকান্দি আসাম থেকে প্রকাশিত পত্রিকা “প্রবাহ” সম্পাদক আশিসরঞ্জন নাথ-এর হাতে পুরস্কার ও মানপত্র তুলে দেন উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশন সংস্থার সম্পাদক ফারুক আহমেদ। জিয়াগঞ্জ মুর্শিদাবাদ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা “অনুভব”, সম্পাদক সমীর ঘোষ; মধ্যভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের ভিলাই থেকে প্রকাশিত পত্রিকা “মধ্যবলয়”, সম্পাদক দুলাল সমাদ্দার; আর রাঁচি থেকে প্রকাশিত পত্রিকা “প্রৈতি”, তবে প্রৈতি সম্পাদক ড. গৌতম মুখোপাধ্যায় বিশেষ অসুবিধার কারণে সভায় উপস্থিত হতে পারেননি।
বাসভূমি ৪৪বর্ষ সংখ্যা প্রকাশ হয় “উদার আকাশ” পত্রিকার তরুণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, রাজ্যের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী খাজিম আহমেদ, কবি ও কবিতাকোণ সম্পাদক তপন ভট্টাচার্য ও বিশিষ্ট কবি নিখিল সরকার ও সন্দীপ বিশ্বাসের হাত ধরে।
মান্য খাজিম আহমেদ ও কবি নিখিল সরকার উভয়েই বাসভূমির সমাজ আর্থ-রাষ্ট্রনৈতিক দৃষ্টিকোণের প্রেক্ষিতকে প্রশংসা করেন।
কবিতা পাঠ করেন কলকাতার নতুন গতি পত্রিকার সহ সম্পাদিক মনিরা খাতুন, মুর্শিদাবাদ জেলার তরুণ কবি এম এ ওহাব, নুরুল হাসান এবং প্রবীণ কবি আবদুস সালাম এবং ভিলাই ছত্তিশগড় থেকে আগত কবি পল্লব চট্টোপাধ্যায়।
দুরন্ত সংগীত পরিবেশন করেন নবম শ্রেণির বালিকা কোয়েলিয়া দত্ত — ওল্ডম্যান রিভার। তিন খ্যাতিমান বাচিকশিল্পী অনিন্দিতা দেব ঘোষ, মধুমিতা গাঙ্গুলী ও রাখি বিশ্বাস তাঁদের সমাজ সচেতন কবিতায় দর্শকদের অভিভূত করে তোলেন।
ঠিক সকাল এগারোটায় অনুষ্ঠান শুরু হয় নাজিম হিকমতের কবিতা অবলম্বনে গান “পল রবসন ওরা চায় না” দিয়ে, যাতে অংশগ্রহণ করে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা, পরিচালনা করেন ওফেলিয়া চন্দ্র দত্ত। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপিকা দেবযানী ভৌমিক চক্রবর্তী। সভাপতি কবি ও পুরাতত্ত্বিক শম্ভুনাথ ভট্টাচার্যের সমাপ্তিভাষণের মধ্য দিয়ে বেলা দুটো দশে এই অভূতপূর্ব পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষ হয়।
তবে আজ এই অনুষ্ঠানে, বর্তমান সমাজে আত্মজনদের মধ্যেকার প্রীতি ও আন্তরিকতার ক্রমহ্রাসমান, ক্ষয়িষ্ণু সম্পর্কের বিপরীতে এক অসামান্য চিত্রকল্প সৃষ্টি হলো যখন কবি অরূপ চন্দ্র’র দুই ভাই ও দুই ভাইপো অনুষ্ঠান সভাপতির অনুমতিক্রমে মঞ্চে এসে তাঁদের বড়দাদাকে তাঁর আজীবন কাজের জন্য সংবর্ধিত করলেন ও বললেন তাঁদের দাদার জন্য তাঁরা গর্বিত, বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত ভাইপো বললেন তাদের জ্যেঠুর নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্য ইতিহাস গবেষণা তাঁদের কাছে অনুপ্রেরণাময় তখন পুরো হল এই মিলনের চিত্রটিকে করতালির মাধ্যমে সমর্থন করেন। নতুন গতি সম্পাদক এমদাদুল হক নূর সরাসরি বলেন— এই আত্মীয়তাবোধ বর্তমান সমাজে শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।
আজকের এই অনুষ্ঠান একা হাতে সঞ্চালনা করেন পুরস্কারের উদ্যোক্তা তথা ১৯৮০ থেকে প্রকাশিত হওয়া বাসভূমি পত্রিকা’র সম্পাদক ৭৩ বছরের তরুণ কবি অরূপ চন্দ্র। পাশে থেকে সব ব্যবস্থাপনা সুচারুভাবে সম্পন্ন করেন সাহিত্য সংস্কৃতিকর্মী অরিন্দম চন্দ্র।