ভুরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
ভোট আসলেই মাথা যেন খারাপ হয়ে যায় আব্দুল হাই মাস্টারের। কোন নির্বাচনই তিনি বাদ দেন না। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত করেছেন। এর মধ্েয একবার ইউপি চেয়ারম্যান ও একবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এবার তার স্বপ্ন জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার। এলাকার লোকজন তাই ‘ভোটপাগল আব্দুল হাই মাস্টার’ বলেই ডাকেন। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ভোট পাগল আব্দুল হাই মাষ্টার আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় এলাকা ২৫ কুড়িগ্রাম-১ আসনের জাকের পাটির গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে প্রাথী হয়েছেন।
ভূরুঙ্গামারী-নাগেশ্বরী উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম -১ আসন। এই দুটি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে আব্দুল হাই মাষ্টার সংসদ সদস্য পদে ভোট প্রার্থনা করে বাইসাইকেলে চড়ে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ঘুরে হ্যান্ডমাইকে ভোট চাইছেন তিনি। তার বাইসাইকেলে লাগানো থাকছে বিভিন্ন রংগের কৃত্তিম গোলাপ ফুল, ঝুলানো থাকছে একটি কাপড়ের ব্যাগ, তার ভিতরে থাকছে কাপড়-চোপড়সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। নির্বাচনী প্রচার করতে গিয়ে যেখানে রাত হচ্ছে সেখানেই কোনো বাড়িতে রাত্রিযাপন করছেন। পরদিন সেখান থেকে আবার প্রচারণা শুরু করছেন। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। জানা গেছে, তিনি চারবার ইউপি চেয়ারম্যান পদে, চারবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে এবং চারবার জাতীয় সংসদের সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে একবার তিনি বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ২০০৯ সালে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ সময় স্থানীয় জনসাধারণ নগদ টাকা, বাড়ি বাড়ি চাল ও মুড়ি তুলে তাকে সহায়তা করেছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর তিনি বেশিরভাগ সময় ড্রেন পরিষ্কার ও রাস্তা-ঘাট ঝাড়ু দিয়ে মানুষের আলোচনায় এসেছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাস্টার স্কুলশিক্ষক ছিলেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে তিনি উপজেলার চর-ভূরুঙ্গামারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। গত শনিবার দুপুরে উপজেলার সোনাহাট বাজারে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কথা হয় আব্দুল হাই মাস্টারের সাথে। তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাকের পার্টির প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদের ২৫ (কুড়িগ্রাম-১) আসনে (নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা) প্রতিদ্বন্দিতা করেছি। এবারও জাকের পার্টির প্রার্থী হিসাবে গোলাপ ফুল মার্কা নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। নির্বাচন আমি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারবে না। চেয়ারম্যান হয়েছি উপজেলা চেয়ারম্যানও হয়েছি। বাকি আছে জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার। গত এক বছর থেকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করেছি এবং প্রতিটি এলাকায় জনগণের বিপুল সাড়াও পাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি, আল্লাক আমার ইচ্ছা পূরণ করবে এবং আমাকে এমপি বানাবে। আমি এমপি নির্বাচিত হলে দুধকুমার নদের পাড়ে একটি নদীর বন্দর স্থাপন, মাধ্যমিক শিক্ষকদের এককালীন পেনশন ব্যাবস্হা সহজীকরন, নদী ভাঙ্গন রোধসহ বিভিন্ন সমস্যা সংক্রান্ত নিয়ে মহান জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করে পাশের চেষ্টা করব । আব্দুল হাইয়ের প্রচারণা শুনতে আসা জাহাঙ্গীর জুয়েল, আব্দুর রহমান শাহজাহান আলী, লিয়াকত আলী ও সবুর মিয়া বলেন, মানুষ আব্দুল হাইকে পাগল বলুক আর যাই বলুক, আমরা উপজেলা নির্বাচনের সময় যেমনভাবে তাকে ভোট দিয়েছি এবার সংসদ নির্বাচনে আমাদের এলাকার লোক হিসাবে আমরা তাকে ভোট দিয়ে জাতীয় সংসদে পাঠাব। যাতে তিনি এলাকার মানুষের সেবা করতে পারেন ও আমাদের মতো গরীব মানুষের মনের কথাগুলো মহান সংসদে উত্থাপন করে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেন। উল্লেখ্য এবারের নির্বাচনে আব্দুল হাই মাষ্টারের সাথে ভোটে লড়ছেন গত তিন বারের এমপি জাপা মনোনীত প্রার্থী একেএম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক (লাঙ্গল) বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের কাজী লতিফুল কবীর রাসেল (ফুলের মালা) ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নুর মোহাম্মদ ( আম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরুজ্জামান খানা ভাসানী (এক তারা)।