রংপুর প্রতিনিধি.
রংপুর জেলা ও শহর ছাত্রদলের দলীয় কার্যক্রম অছাত্র,বয়স্ক,বিবাহিত,ব্যবসায়ী,চাকুরিজীবি আর সন্তানের পিতাদের দিয়ে চলছে। যার ফলে বিএনপির ভ্যানগাড হিসাবে পরিচিত এই ছাত্র সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। ৬ বছর ধরে রংপুর জেলা ছাত্রদলের সম্মেলন হচ্ছে না। রংপুর সিটি কর্পোরেশন হবার পরও ২০০৪ সালের গঠিত রংপুর শহর কমিটি দিয়ে চলছে রংপুর মহানগর ছাত্রদলের কার্যক্রম।নতুন করে কমিটি না হওয়ায় প্রকৃত ছাত্রনেতারদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
একাধিক দলীয় সুত্রে জানাগেছে, রংপুর জেলা ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি গঠন হয় ২০১০ সালের ২৭ আগষ্ট। আর রংপুর শহর কমিটি গঠন হয় ২০০৪ সালে। রংপুর কে বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন করা হলে মহানগর কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও দীর্ঘ ৫ বছরেও ছাত্রদলের রংপুর মহানগর কমিটি গঠন করা হয়নি। এমনিতেই পুর্বের রংপুর জেলা ও শহর কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের সঠিক মুল্যায়ন না করায ছাত্রদলের একটি অংশ ক্ষুদ্ধ। তারা দীর্ঘদিন মিটিং মিছিলসহ দলীয় কার্যক্রম পর্যন্ত আলাদা ভাবে পালন করেছে। যা সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিএনপির রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন হওয়ার পর প্রকাশ্যে রুপ নেয়।
সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলা ছাত্রদলের ৬ বছর ধরে কোন সম্মেলন না হওয়ায় সাধারণ ছাত্রনেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে রংপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের রাজনীতি নেতৃত্ব দিন দিন বিহীন হয়ে পড়েছে।অসংখ্য ছাত্রনেতা দীর্ঘদিন ধরে পদপ্রত্যাশী হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রীয় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সম্মেলন না হওয়ায় নিয়মিত ছাত্র ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। মেয়াদ উত্তীণ বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের রংপুর জেলা ও শহর কমিটিসহ জেলার অধিকাংশ উপজেলা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড কমিটির বর্তমান কমিটির পদ-পদবীধারী অধিকাংশ নেতারই ছাত্রত্ব নেই। সভাপতি,সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ন সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতারাই বিবাহিত। তারা এখন ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি, চাকরি, স্ত্রী,সন্তান ও সংসার নিয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এরপরও তারা নিজ নিজ পদে বহাল রয়েছেন।
একটি সুত্র জানায়, রংপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রিয় ছাত্রদলের সহসভাপতি জহির আলম নয়ন বিয়ে করে সংসার করছেন। সহ-সভাপতি ও কারমাইকেল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মোকছেদুল আরেফিন পান্না, সহ সভাপতি শরিফুল ইসলাম রুবেল বিয়ে করেছেন। এর মধ্যে পান্না একটি বীমা কোম্পানীতে চাকুরী করছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আরেফীন সুমন ঢাকা একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। জেলা ছাত্রদলের যুগ্ন সম্পাদক শাহ জিললুর রহমান জেমস বিবাহিত আরেক যুগ্ন সম্পাদক উৎপল ভৌমিক ব্যবসার সাথে জড়িত। জেলা ছাত্রদলের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক নুর হাসান সুমন বিয়ে করে অটো পার্টস ব্যবসায় জড়িত, জেলা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া ইসলাম জিমও বিবাহিত। তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন।, যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম বিবাহিত ও ব্যবসার করছেন। অন্যদিকে রংপুর শহর ছাত্রদলের সভাপতি আতিকুল ইসলাম লেলিন,সহ সভাপতি আহসান হাবিব পাপ্পু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন শাহিন বিবাহিত। এর মধ্যে শাহিন বর্তমানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমানের এপিএস হিসাবে রয়েছেন। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথেও জড়িত। রংপুর সদর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম জুয়েল বিবাহিত ও চিনিকলে চাকুরী করছেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মাসুদ আলম চাকুরীরত। এছাড়াও ছাত্রদল কমিটির রংপুর জেলা, উপজেলা,ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের অনেক নেতারা বিবাহিত। অনেকে একাধিক সন্তানের জনক। নেতাদের ছেলে ও মেয়েরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তবুও এরা ছাত্রদলের নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানান, ২০১০ সালে রংপুর জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর আর কোন কমিটি গঠন করা হয়নি।সংবিধান মতে ৩ বছর পর পর কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। কিন্তুু তা করা হচ্ছে না। এছাড়াও সিটি কর্পোরশেন এলাকায় মহানগর কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও রংপুরে তা বিগত ৫ বছরেও হয়নি।
এদিকে তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছাত্রদলের ত্যাগী ও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব দেয়া হোক। আর যারা নিয়মিত ছাত্র,ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতা, যাদের ছাত্র রাজনীতি করার সঠিক বয়স আছে এবং যারা বিয়ে করেন নি তাদের মধ্য থেকে যাচাই বাচাই করে তাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হোক। অনেকেই জানান, নতুন কমিটি বিবাহিত অছাত্রদের নিয়ে গঠন করা হলে তারা পদত্যাগ করবেন।
এব্যাপারে রংপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জহির আলম নয়ন ও সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান হিজবুল, শহর কমিটির সভাপতি আতিকুল ইসলাম লেলিনের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন