তাজিদুল ইসলাম লাল, রংপুর
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার অভিযোগে বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ও সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভা শেষে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী এসব কথা জানান।
বরখাস্ত হওয়া দুই শিক্ষক হলেন-গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান এবং লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মন্ডল। বরখাস্ত হওয়া সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন, রাফিউল হাসান রাসেল, তৌহিদুল জনি, হাফিজুর রহমান তুফান, মনিরুজ্জামান পলাশ, নুরুন্নবী, আশিকুন্নাহার টুকটুকি ও আমির হোসেন আমু ।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিতকরণ ও শাস্তির ধরণ নির্ধারণের জন্য গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত বলেন, ঘটনার পর থেকে শতাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন। তাদের ছুটি না মঞ্জুর করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাদের বেতন কাটা হয়েছে। সেই সাথে শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ঘটনায় জড়িত তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই শিক্ষক ও সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৭২ শিক্ষার্থীর নামে মামলা করা হবে। এছাড়াও শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা পলাতক রয়েছেন, তাদের ছুটি বাতিল করা হবে এবং সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। তিনি আরো জানান, শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে তিন ক্যাটাগরিতে শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সিন্ডিকেট সভায়। যে সব শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে সনদ গ্রহণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এমন শিক্ষার্থী, যারা আত্মপক্ষ সমর্থনের আবেদন করেছেন এবং যারা যারা আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন আবেদন করেননি তাদের অভিযুক্তের উপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, ক্যাম্পাসে কোন লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররাজনীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজ কর্মকান্ড পরিচালনার সুযোগ কেউ পাবে না। কেউ লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে প্রমাণিত হলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে ছাত্রসংসদ চালুসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণসিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ও লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজন শিক্ষকের বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন, বাংলা বিভাগের ড. তুহিন ওয়াদুদ, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মোঃ ইউসুফ ও গণিত বিভাগে আইরিন আক্তার।
১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মডিউর রহমান।