তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে
বিচারিক আদালতের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিপক্ষের দূর্বৃত্তরা ১ একর ৩২ শতাংশ জমির প্রায় ৬০ মন পাকা আমন ধান কেটে নিয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের আগ সরদারপাড়া গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল আনুমানিক সাতটার দিকে একই গ্রামের প্রতিপক্ষ গ্রুপের ইয়াকুব আলী, শাহাবুদ্দিন ও ইউনুস আলীর নেতৃত্বে প্রায় ২৫/৩০ জন দুর্বৃত্ত হাতে কাচি, লোহার রড, সুরপি ও হাশুয়া নিয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তফসিলে বর্ণিত ১৩২৮,১৩২৯,১২৭১ দাগের ১ একর ৩২ শতাংশ জমির চতুর্দিকে অবস্থান নেয়।
এরপর তারা হুমকি দিয়ে বলে, আজ কোন শালা ধান কাটতে বাধা দিতে আসলে তাদের এখানেই জবাই করে লাশ জমিতে পুঁতে রাখা হবে। এ অবস্থায় জমির মালিক আজিজুল হক (৭০)গংরা প্রতিপক্ষদের মারমুখী তৎপরতা বুঝতে পেরে প্রাণ নাসের আশঙ্কায় জমিতে যাওয়ার সাহস পায়নি বলে জানান।
পরবর্তীতে দুর্বৃত্তরা ১ একর ৩২ শতাংশ জমির পাকা ধান সম্পূর্ণ কেটে নিয়ে প্রথমে ধানের আটি রাস্তায় জড়ো করে। এরপর তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ধানের আটি প্রতিপক্ষের বিভিন্ন জনের বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করে ধান বস্তায় ভর্তি করে রাখে। এ সময় সেখানে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
ওই সময় ধান কাটার সাথে জড়িত অন্যান্য দুর্বৃত্তরা হচ্ছে, নূর মোহাম্মদ, নুর ইসলাম, লুৎফর রহমান, আখের আলী, আইজুল হক, রাশেদুল হক,সাগর মিয়া, আবু তালেব, মতিউর রহমান, আবেদ আলী, সাবেদ আলী,মহুবর, তুহুর আলী, বাবু মিয়া, মাসুদ মিয়া, আকাশ মিয়া, শাহিন মিয়া, সাগর মিয়া, মোখলেসুর রহমান, সুমন মিয়া, ফিরোজ আলী মন্ডল ও আবুল হোসেন।
এ ঘটনায় জমির মালিক পক্ষ প্রায় ৮০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে ওই গ্রামের শাহাবুদ্দিন, ইয়াকুব ও ইউনুস আলী গংরা বাদী হয়ে আজিজুল হক (৭০) গং দের বিরুদ্ধে ২১৫/৯৪ নং একটি বাটোয়ারা মামলা করেন। মামলাটি দীর্ঘদিন চলার পর বাদী পক্ষ শাহাবুদ্দিন গংরা আদালতে হেরে যান। কিন্তু বিবাদীপক্ষ আজিজুল গংদের জনবল কম থাকায় বাদিপক্ষের দুর্বৃত্তরা মামলায় হেরে যাওয়ার পরও পেশী শক্তির বলে জমি জবরদখল করে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন।দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, তফশিলে বর্ণিত জমি প্রতিপক্ষরা যাতে জবরদখল করতে না পারে সে আশঙ্কায় বিবাদী পক্ষের আজিজুল হক গং সিনিয়র সহকারী জজ আদালত উলিপুর, কুড়িগ্রাম এ তফশিল বর্ণিত জমিতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। আদালত গত ১৪/০৫/২৪ ইং তারিখ ১৩ নং আদেশ বলে তফসিল বর্ণিত জমিতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন। এরপরও প্রতিপক্ষরা জমি দখলের জন্য নানাভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে বাদী পক্ষ আজিজুল গং নিরাপত্তা চেয়ে কুড়িগ্রাম সেনা ক্যাম্প ও উলিপুর থানায় এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর সেনা ক্যাম্প থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে জাফর আলী, জহুরুল হক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সামাদের উপর দায়িত্ব দেন। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কয়েক দফা বৈঠক করার পরও বিষয়টি মীমাংসা করতে ব্যর্থ হন।
এদিকে, চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার নোটিশ পেয়ে বিবাদী পক্ষ শাহাবুদ্দিন গং রা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে উপস্থিত হয়ে তফসিল বর্ণিত জমিতে যাবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে আসেন। এমনটি তারা দাবি করেন, তফসিল বর্ণিত জমিতে তারা কখনোই জাননা।
অথচ ধুরন্ধর শাহাবুদ্দিন গংরা বিজ্ঞ আদালতের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাদী আজিজুল হক গংদের জমির সম্পূর্ণ ধান গত মঙ্গলবার কাক ডাকা ভোরে কেটে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষজনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।