তাজিদুল ইসলাম লাল, রংপুর
ঐতিহ্যবাহী রংপুর প্রেসক্লাবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগ ও সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে একাট্টা হয়েছে রংপুরবাসী। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর আমলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের দূর্নীতি ঢাকতে মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধ করার চেষ্টা করছে। সমাজসেবার এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে রংপুরের প্রায় ৩৫টি সাংবাদিক, সামাজিক, সাংষ্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠন। গতকাল সোমবার দুপুরে রংপুরের সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ জনতার ব্যানারে রংপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে আড়াই ঘন্টা ধরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য সাংবাদিক আরিফুল হক রুজু’র সভাপতিত্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তারা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গেছেন। গণঅভ্যূত্থান পরবর্তীতে অপকর্ম ঢাকতে তারা সাংবাদিকদের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছে। নিবন্ধন নবায়নকে কেন্দ্র করে ষাট বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী রংপুর প্রেসক্লাবে অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। রংপুরে কর্মরত ১৯ পেশাদার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তাদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে। সেই সাথে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে প্রেসক্লাবে সংরক্ষিত জুলাই অভ্যূত্থানে ছাত্র-জনতার উপর বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের তান্ডবের নানা ধরনের ডকুমেন্ট নষ্ট করার চেষ্টা করছে এবং প্রেসক্লাবে সদস্যদের সংরক্ষিত নানা মূল্যবান কাগজপত্র, টাকা-পয়সা খোয়া যাওয়ার শংঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মানববন্ধন সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ‘সমাজ সেবার কর্মকর্তারা রংপুর প্রেসক্লাবকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তারা একটি কুক্ষিগত দুর্নীতিবাজ গুষ্টিকে সুবিধা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মিথ্যে এজাহার সাজিয়ে সাংবাদিকদের নামে মামলা করে সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটা রংপুরের সাংবাদিক সমাজ মেনে নিবে না।’ দ্রæত সাংবাদিকদের নামে মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার করে ঐতিহ্যবাহী রংপুর প্রেসক্লাবের বৈধ কমিটির হাতে প্রেসক্লাব ফিরিয়ে দেওয়া না হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হয় ওই মানববন্ধন থেকে।
মানববন্ধন সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান বাদল, জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি মোঃ নুরুজ্জামান, জেলা মটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম বারী রাজ, জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন পারভেজ, জাসদ নেতা মিরাজুন নবী মিলন, বাসদ নেতা মমিনুল ইসলাম, ইউনিটি ফর ইউনিভার্স হিউমান রাইট্স অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় মহাসচিব মোজাক্কের হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদ হোসেন সুইডেন, রংপুর আর্ট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম রেপিট, একাত্তর গণতান্ত্রিক পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম সাজু, প্রজন্ম একাত্তরের কেন্দ্রীয় সংগঠক দেবদাস ঘোষ দেবু, প্রেসক্লাব দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, পাকার মাথা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বারী মিঠু, সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন সুমন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী, সিনিয়র সদস্য জয়নাল আবেদীন, দৈনিক বায়ান্নার আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাজিদুল ইসলাম লাল, বার্তা সম্পাদক আশরাফুল আলম আপন, পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ্ মোঃ সাদা মিয়া, প্রেসক্লাব সদস্য সময় টিভি’র স্টাফ রিপোর্টার রেদওয়ান হিমেল, দৈনিক বিজনেস বাংলাদেশের ব্যুরো প্রধান আঞ্জু মনোয়ারা বেগম রেখাসহ অন্যরা। মানববন্ধন সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন, প্রেসক্লাব সদস্য দীপ্ত টিভি’র প্রতিনিধি বাবলুর রহমান বারী ও বৈশাখী টিভি’র রংপুর প্রতিনিধি ইসমাইল হুসাইন প্রিন্স।
এদিকে প্রেসক্লাবে অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার রংপুরের কৃতি সন্তান সোহরাওয়াদী শুভ, নাসির হোসেন এবং আরিফুল ইসলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা অবিলম্বে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে মামলা তুলে দেওয়ার জোর দাবী জানান।
উল্লেখ, রংপুরের ১৯জন সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও দুই কর্মচারীকে হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ এনে গত ২৩ জানুয়ারি রংপুর কোতয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন রংপুর শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান।।