এস.এম. রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
অধিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ বিদেশী সবজি স্কোয়াশ চাষ করে শস্য প্রধান দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় সাফল্য পেয়েছে কৃষক মকবুল হোসেন। তাঁর মত অল্প পুঁজি ও শ্রমে মালচিং পদ্ধতিতে উপজেলার ৭ জন কৃষক স্কোয়াশ চাষ করেছেন। শসার মত দেখতে এই সবজি চাষের মধ্য দিয়ে উপজেলার কৃষিতে যোগ হয়েছে নতুন একটি সবজি। এতে স্কোয়াশ চাষে নতুন সম্ভাবনাও দেখছে কৃষি বিভাগ।
স্কোয়াশ সবুজ ও হলুদ দুই রঙের হয়ে থাকে। অনেক আগে থেকে বাংলাদেশে স্কোয়াশের চাষ শুরু হলেও খানসামা উপজেলায় গত মৌসুম থেকে এই সবজির চাষ শুরু হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে বেশ সাফল্য পেয়েছেন চাষীরা।
স্কোয়াশ দেখতে শসার মত হলেও গাছটি মিষ্টি কুমড়ার মত। পাতা, ডগা, কাণ্ড দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি মিষ্টি কুমড়া নাকি স্কোয়াশ গাছ?
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭ টি স্থানে চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের সহায়তায় স্কোয়াশ চাষ হয়েছে। প্রতি স্থানে প্রায় ২০ শতক জমিতে স্কোয়াশ চাষ হয়েছে। এতে দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, জৈব বালাইনাশক এবং সহায়তা প্রদান করেছে কৃষি বিভাগ।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া দোলাপাড়া, আংগারপাড়া ও জাহাঙ্গীরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তাঁর ক্ষেতের প্রতিটি গাছে ঝুলছে ছোট-বড় স্কোয়াশ। এসব কোনটা পাকা, আবার কিছু পরিপক্ব হওয়ার পথে। এই সবজিতে রোগবালাই কম, বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার বেশি ফলন হয়েছে। কৃষকরা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। এছাড়াও পরিপক্ব স্কোয়াশ তুলে বিক্রির জন্য আড়তে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক। প্রতিটি স্কোয়াশের ওজন প্রায় এক কেজি থেকে তিন-সাড়ে তিন কেজি।
আংগারপাড়া এলাকার কৃষক তাইজুল ইসলাম বলেন, শীতকালীন সবজি হিসেবে চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এর বীজ বপন করতে হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরে জমিতে এ বীজ রোপণ করা হয়। বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে। ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই মাস। যা অনেক লাভজনক। বর্তমানে অন্য সবজির দাম কম হওয়ায় স্কোয়াশ গড়ে প্রতি পিস ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্কোয়াশ চাষী মকবুল হোসেন বলেন, প্রথমবারের মত কৃষি বিভাগের সহায়তায় স্কোয়াশ আবাদ করছি। এতে অন্য ফসলের চেয়ে খরচ ও পরিশ্রম কম। আলুসহ অন্য সবজির দাম কম হওয়ায় বর্তমানে প্রতি পিস স্কোয়াশ গড়ে ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ২০ শতক জমিতে প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করে ৬০-৭০ হাজার টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করা যাবে। তিনি আরো বলেন, তাঁর ২০ শতক জমিতে প্রায় ৫০০ স্কোয়াশ বীজ রোপণ করা হয়েছে। প্রতি গাছ থেকে ৮-১০ বার স্কোয়াশ তোলা যাবে। যা অনেক লাভজনক হওয়ায় আগামীতে স্কোয়াশ চাষ বৃদ্ধির কথা জানান তিনি।
তিনি আরোও বলেন, পানির ব্যবহার কমাতে, আগাছা ও রোগ বালাই থেকে গাছকে সুরক্ষা দিতে মালচিং পেপার ব্যবহার করেছেন। ক্ষেতে কীটনাশকের পরিবর্তে ফেরোমন ট্যাপ ও ইয়োলো স্টিকিট্র্যাপ ব্যবহার করেছেন। যাতে কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া যায়। কীটনাশকমুক্ত থাকায় তাঁর স্কোয়াশের ফলন ও বিক্রিও অনেক ভালো।
ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এস এম ফারুক আহমেদ বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষে লাভবান হচ্ছেন। বাজারে চাহিদা ও কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অন্য কৃষকরা স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন।
খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, এ উপজেলায় ৭ জন কৃষক কৃষি বিভাগের সহায়তায় স্কোয়াশ চাষ করেছেন। এই শস্যটি অপ্রচলিত হলেও লাভজনক। কৃষক ও সাধারণ মানুষ এই ফসলের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারলে উৎপাদন ও চাহিদা বাড়বে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সবধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে।