ঢাকা অফিস

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরকালে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নামে চুক্তি বা এমওইউ সম্পাদন প্রক্রিয়ার ঘটনার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ন্যাপ’র আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতি ও জাতীয় স্বাধীনতা বিরোধী। তারা বলেন, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর স্বপ্নের বাংলাদেশের জনগন জাতীয় স্বাধীনতা বিপন্ন করার কোন চুক্তি নেবে না।
শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনস্থ যাদু মিয়া মিলনায়তনে ‘৯মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এক দফা দাবী স্মরণে’ বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ঢাকা মহানগর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
ন্যাপ নগর আহ্বায়ক সৈয়দ শাহজাহান সাজু‘র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান কাজী ফারুক হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ নুরুল আমান চৌধুরী, সম্পাদক আহসান হাবিব খাজা, মোঃ কামাল ভুইয়া, মতিয়ারা চৌধুরী মিনু, নগর সদস্য সচিব মোঃ শহীদুননবী ডাবলু, যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আনছার রহমান শিকদার, প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলাম, জাতীয় ছাত্র কেন্দ্রের সমন্বয়কারী সোলায়মান সোহেল, যুব ন্যাপ যুগ্ম সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল কাউছারী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি ভারতের দিল্লীতে সম্পাদিত হাসিনা-মনমোহন গোপন চুক্তি বাংলাদেশকে ভারতের অধীনস্ত করে রেখেছে। এই দাসত্বের চুক্তি বাংলাদেশকে ভারতের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে রাখার চুক্তি। এই চুক্তির কারণেই দেশের সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী খুনী বিএসএফ বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করে চললেও সরকার এর বিরুদ্ধে টু শব্দ করে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ধাপ্পাবাজির নির্বাচনে ভারতের উলঙ্গ হস্তক্ষেপ ও সমর্থন তার প্রমাণ।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে যে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম রয়েছে তার পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ মদদ আজ আর দেশবাসীর কাছে অজানা নয়। জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা ও ফ্যাসিবাদী শাসন অবসানে রাজপথে শ্রমিক কৃষক নিপীড়িত জাতি ও জনগণকে সংগ্রামে নেমে আসার কোন বিকল্প নাই।
গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ২৫ বছর গোলামি চুক্তি করেছিল ভারতের সাথে। প্রধানমন্ত্রী এপ্রিল মাসে ভারতে যে সফর হবে, আমরা যেটা দেখতে পারছি, গুণগুণ করে মানুষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, সংবাদপত্রেও এসেছে-একটা সামরিক চুক্তি হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে ন্যাপ’র অবস্থান স্পষ্ট। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের নিরাপত্তা যদি ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়, ভারতের কথা অনুযায়ী, ইচ্ছা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা নীতি যদি গ্রহণ করতে হয়, তাহলে এদেশের স্বাধীনতা থাকবে না। এই ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে এদেশের জনগণ মানবে না, নিরাপত্তা বাহিনী মানবে না, কেউ মানবে না। তারা প্রতিরোধে এগিয়ে যাবে।

গোলাম মোস্তফা ভুইয়া ৯ মার্চের ঘঁটনাপ্রবাহ আলোচনা করে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হুট করে শুরু হয়নি। বাংলার জনগনকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত করতে মওলানা ভাসানীর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল এলটি দীর্ঘ ধারাবাহিক আন্দোলনের ফসল। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অনেকেই যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে সংলাপে ব্যস্ত তখন ৯মার্চ পল্টনের জনসভায় মজলুম জননেতা বজ্রকন্ঠে উচ্চারন করেন ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামকে কেউ দাবীয়ে রাখতে পারবে না এবং এ ব্যপারে কোন আপোষ সম্ভব নয়’।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিশেষ ব্যক্তি, গোষ্টি বা দলের একক অবদান দাবী করে প্রকারান্তরে যারা ইতহাসকে বিকৃতি করছে তাদের ইতিহাস ক্ষমা করবে না।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ শাহজাহান সাজু বলেছেন, জাতি হিসাবে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনসার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। আর শ্রেষ্ঠ অর্জনকে অর্জিত করতে যে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তাকে যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করা জাতি হিসাবে আমাদের দায়িত্ব। তাঁকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন