হারুন উর রশিদ সোহেল রংপুর.
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, উত্তরবাঙ্গ যার, ঢাকার মসনদ তার। আগামী নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২২টিসহ ৩২ টি আসনে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে পুত্র হারা মা, স্বামী হারা স্ত্রীর চোখের পানি মুছে দিতে চাই। এসময় তিনি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন।
শনিবার বিকেলে রংপুর ঐতিহাসিক পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
এরশাদ বলেন, আমি সারাদেশের ৩৫ টি জেলায় সম্মেলন করেছি। রংপুরের হচ্ছিল না। আজ সে আশা পূর্ন হলো। এসময় তিনি রংপুর জেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণারও নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ভারতে একটা কথা আছে উত্তর প্রদেশ যার, দিল্লির মসনদ তার। আর আমি বলি উত্তরবঙ্গ যার, ঢাকার মসনদ তার। তাই বৃহত্তর রংপুরের ২১টিসহ ৩২ টি আসন পাওয়ার মাধ্যমে আমরা ক্ষমতায় যাবো। আমাদের সেটা পারতে হবে।
তিনি বলেন, এখন টিভির পর্দায় দেখা যায় শুধু দেশে এখন স্বামী হারা স্ত্রীদের কান্নার রোল। সন্তান হারা মায়েদের কান্নার রোল। তাদের এই কান্না আমাদের কারো হৃদয়ে দাগ কাটে। ক্ষমতাসীনদের মনে দাগ কাটে না। মায়েদের, স্ত্রীদের ভাইদের বাপেদের চোখের পানি মুছে দিতে হবে । যাতনা লাঘব করতে হবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, সারাদেশের মানুষের এখন ভরসা জাতীয় পার্টি। ৯০ সালে যখন ক্ষমতা ছেড়েছিলাম। তখন অঙ্গিকার ছিল। আমাকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে। কিন্তু তা করা হয় নি। আমাকে, আমার স্ত্রীকে আমার ৫ বছরের ছেলে ও মেয়েকে জেলে নেয়া হয়েছে। আড়াই বছর জেলে রাখায় আমার সন্তানদের পড়ালেখা হলো। আমার স্ত্রী রাজনীতি করতো না। তবুও তাকে জেলে নেয়া হয়েছে। ৬ বছর আমাকে জেলে রাখা হয়েছে। আমি কারো সাথে কথাটুকুও বলতে পারতাম না।
এক পর্যায়ে চোখে টলমল পানি এনে এরশাদ বলতে থাকেন, আমার সাথে কথা বলার অপরাধে একজন দারোগার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যে মানুষের সাথে প্রতিদিন হাজার মানুষের সম্পর্ক। জনতার সম্পর্ক। সেই মানুষ আমাকে জেলের অন্ধকারে বোবা মানুষ বানিয়ে রাখা হয়েছিল। আমার ডায়াবেটিস ছিল ২৯ দশমিক ২। আমাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হয় নি। আমাকে পৃথিবী থেকে বিদায় করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তারা চেয়েছিল যে আমি অকালে দুনিয়া থেকে বিদাই হয়। কিন্তু তাদের চেষ্টা সফল হয় নি। আল্লাহ আছেন। সেটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আমি বেঁচে আছি।
এরশাদ বলেন, বিএনপি চেয়েছিল আমাকে ফাসি দিবে। কিন্তু তারা পারে নি। রংপুরের মানুষ আমাকে জেলে রেখে ৫ টি আসনে এবং পরবর্তীতেত আবারও ৫ টি আসনে নির্বাচিত করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা বিরল জেলে থাকা মানুষ ৫ টি আসনে নিরুংকুশ বিজয়ী হয়।
এরশাদ বলেন, তবুও আমি সমর্থন দেয় নি। এরপর আমার পার্টিকে ভাগ করা হলো আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দিয়ে। আমার পার্টির এমপিতে ১৫/১৬ কোটি করে টাকা দিয়ে কিনে নেয়া হলো। কোথাও কারো কাছে সুবিচার পেলামনা। অন্ধকারেই থাকলাম। আমাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো।
এরশাদ বলেন, আমার হাত রক্ত রঞ্জিত নয়, এ জন্য আমার কোন গানম্যান লাগে না, সিকিউরিটি লাগে না। আমি সারাদেশ চয়েস বেড়াই। আমার কোন নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, আমাদেরকে তোমরা আবার সুযোগ দিবে। আমি ক্ষমতায় গিয়ে সন্তানহারা মায়ের চোখের স্বামী হারা স্ত্রীর চোখের পানি মুছে দিতে চাই।
এরশাদ আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন। এসময় তুমুল করতালিতে পুরো প্রাঙ্গন মুখিরত থাকে প্রায় ৫ মিনিট। পরে তিনি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে রংপুর মহানগর সভাপতি এবং এসএম ইয়াসিরকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন।
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসিরের উপস্থাপনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, মেজর(অব) খালিদ আখতার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক সেলিম উদ্দিন, বিরোধী দলীয় হুইপ শওকত হোসেন চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান, শাহানারা বেগম এমপি, এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, রংপুর জেলা সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, দিনাজপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি, গাইবান্ধা জেলা সভাপতি আব্দুর রশিদ চৌধুরী, বগুড়া জেলা সভাপতি মোস্তাক কামাল, নীলফামারী জেলা সভাপতি সাজ্জাদ পারভেজ, রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার, দিনাজপুর জেলা সেক্রেটারী আহমেদ শরীফ রুবেল, জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় আহবায়ক আলমগীর কবির লোটন, জাতীয় মোটর শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ, এসময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শাফিয়ার রহমান শাফি, রোকন উজ- জামান বাবুল, হাসানুজ্জামান নাজিম, আব্দুর রাজ্জাক সহ জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।সম্মেলনেরে শুরুর দিকে এরশাদের পুত্র এরিখ এরশাদ জাতীয় পার্টির সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এর আগে এরশাদ জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং শান্তির পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।