মোঃ নুরনবী ইসলাম, খানসামা(দিনাজপুর) প্রতিনিধি :
পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নে ৭ সদস্যের একটি পরিবার দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে অবরুদ্ধ রয়েছে মর্মে অভিযোগ মিলেছে। প্রতিপক্ষরা ভ্যানচালকের ওই পরিবারের সদস্যদের যাতায়াতের রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের আদেশে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি সুরাহা করতে না পারায় ওই পরিবারটি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
সূত্র মতে, ওই ইউনিয়নের মারগাঁও গ্রামের নিজামুদ্দিন হাজী পাড়ায় স্ত্রী, দুই পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানকে নিয়ে বাস করেন ভ্যানচালক আজগার আলী। প্রায় ১০ বছর ধরে প্রতিবেশী আব্দুল জলিলের দেয়া রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচল করতেন তারা। সম্প্রতি পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ওই রাস্তা বন্ধ করে দেয় জমির মালিক জলিল। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পরিবারটি।
সূত্রটি জানায়, অবরুদ্ধ পরিবারটির সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে রাতের আঁধারে পুকুরে সাঁতার দিয়ে গোপনে বাড়ীতে আসা-যাওয়া করে গৃহকর্তা আজগার আলী। বিষয়টি প্রতিপক্ষরা টের পেয়ে ওই পুকুরে কাঁটাযুক্ত গাছের ডালপালা দিয়ে সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে। বড় মেয়ে আরজিনা (১৭) প্রতিবন্ধী। সে বাড়ীর বাইরে যেতে না পারায় অস্থির করে তুলেছে পরিবারের বাকী সদস্যদের। পাশ্ববর্তী কুমুড়িয়া বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেনীতে পড়ে আর এক কন্যা রাশেদা। চলতি অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার প্রথম দিনে বেড়া ডিঙ্গিয়ে স্কুলে যেতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে মারধরের শিকার হয়। তা উপেক্ষা করে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। পরে বিষয়টি স্কুল শিক্ষক আসলাম হোসেন জানতে পেয়ে রাশেদাকে ওই শিক্ষক তার বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে পরবর্তী কয়েকটি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। একদিন রাতের বেলায় চুপিসারে নিজ বাড়ীতে ফিরে আসে রাশেদা। পরেরদিন তাকে আর বের হতে না দেয়ায় ওই দিনের পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
রাশেদা মুঠো ফোনে কাঁদতে কাঁদতে জানায়, সে পরীক্ষা দিতে চায় আর সবার মতো স্কুলে যেতে চায়। তারা অবরুদ্ধ জীবনযাপনের অবসান চায়। প্রতিবন্ধী বড় বোনের অবস্থার কথা উল্লেখ করে রাশেদা জানান, দেশে এমন কোন মানুষ কি নেই- যারা আমাদেরকে রক্ষা করবে।
ভ্যানচালকের স্ত্রী আক্তার রিনা জানান, ইউএনও স্যারকে অভিযোগ জানিয়েছি। পুলিশ ও চেয়ারম্যান সাহেব এসেছিল কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। তারা চলে যাওয়ার পর অভিযোগ দেয়ার কারণে জলিলের লোকজন আমাদেরকে লাঞ্চিত করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভয়ে এখন ঘরের বাইরে য়েতে পারছিনা। রাতের বেলায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে জেগে জেগে থাকছি।
কথা হয় খানসামা থানার এ এস আই দুলাল মিয়ার সাথে। তিনি জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রাথমিক তদন্তে গিয়ে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। পরিবারটি অবরুদ্ধ রয়েছে। তিনি জানান, ভ্যানচালকের পরিবারটি যে পথ দিয়ে চলাচল করতো তা মালিকানাধীন। ইতিপূর্বে মালিকানাধীন ওই জমির ওপর দিয়ে তারা চলাচল করতো। কিন্তু ভ্যানচালকের পরিবারের সাথে জমির মালিকের দ্বন্দ্ব হওয়ায় ওই পথ বন্ধ করে দেয়।
ভাবকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গরীব পরিবারটি চলাচলের অনুমতি দেয়ার জন্য জমির মালিকদের অনুরোধ করেছি কিন্তু তারা রাজি হননি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।