ফারুক আহমেদ
শরৎ আমাদের উৎসবের ঋতু। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সামাজিক, ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত আনন্দ অনুষ্ঠান ও তাকে কেন্দ্র করে মিলনমেলাই হল উৎসব। এই আবহে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার বাতাবরণ যে-কোনো উৎসবকে আরও নিবিড় ও প্রাণবন্ত করে তোলে। এবারে মহাষষ্ঠীর দিন অর্থাৎ ২০.১০.২০২৩ মিল্টন মিউজিকের তরফে প্রকাশিত হল শরতের আবহে বাংলা গান ‘ঝরে যাই আমি’।
তমাল রায় ও তৃষা বনসল যথাক্রমে জুরিখ ও শিকাগোর বাসিন্দা, তাঁরা দুজনেই বিজ্ঞানী। কিন্তু সঙ্গীত তাঁদের শিক্ষায়, চর্চায় ও মননে গভীরভাবে প্রোথিত। তাঁরা প্রবীর ঘোষ রায়ের লেখা এই গানটিতে দুজন মিলে দুই জায়গায় বসে একটু একটু করে সুর দেওয়া, সঙ্গীতায়োজনের যাবতীয় কাজটি করে, সেমিফাইনাল গাওয়াও সেরে রাখেন বেশ কিছুদিন। সেই অডিও ক্লিপ নিজেদের বন্ধুমহলে শেয়ার হলে, প্রচুর উৎসাহ পান। শেষমেশ মিলটন মিউজকের উৎসাহে গানটি তমালের সুইজারল্যান্ডের বাড়িতে বসে ওর নিজের তত্ত্বাবধানে ও প্রকৌশলে রেকর্ড হয়। মিলটন তাঁর দক্ষতায় চিত্রায়ন করেন এবং প্রকাশিত হয়।
ঝরে যাওয়া যে ঝরে যাওয়া নয়, পুনরায় ফিরে আসার আবহ– প্রবীর তাঁর দীর্ঘদিনের অধ্যাপনা ও যুগ্ম শিক্ষা অধিকর্তার অভিজ্ঞতাপুষ্ট পোক্ত কলমে এই কথাই যেন লিখেছেন তাঁর গানে গানে। মাটির প্রতিমার পুজো হওয়ার পর বিসর্জন হয়ে যায়, বাতাসে আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা খড়কুটো হয়ে মিলিয়েও যায়, তবু অন্ধকার কেটে আলো আসে, রোদ্দুর ওঠে, বেড়ালের ছোট্ট মৃদু থাবায় বহমান হয় প্রাণ চাঞ্চল্য, সাদা পালকের মেঘ-ভাসা নীল আকাশের পাতায় লেখা হয় সৃষ্টির কবিতা, আশ্বিনের শিউলি সুবাসে কাশবনে ঢেউ তুলে কিশোরীর ঠোঁটে জেগে ওঠে আগমনী গান।
এই আবহে কোন কিছুই আদপে ঝরে যাবার নয়, জীবনের বন্ধনে কবি, পাঠক, গায়ক, শ্রোতা সকলেই জেগে ওঠেন শরতের মায়াময়তা ও জীবনের নিবিড় বন্ধনে।
তমালের গান শুনে মনে পড়ে যায় সুবীর সেনের গান। অত্যন্ত অনুচ্চকিত অথচ সুরেলা মায়ায় এই গানের চলন যেমন মস্তিষ্কে ও চেতনায় জায়গা করে নেবে, তেমনই এই গানের আবেদন মনকে ভরিয়ে রাখবে অনেকক্ষণ। প্রবীর, তমাল, তৃষা এই গানটিতে তাঁদের পৃথক সাক্ষর রেখেছেন এই কথা নিঃসন্দেহে বলাই যায়। ইউ টিউব সহ বহু প্ল্যাটফর্মে এই গান শোনা যাচ্ছে। ইউটিউবের লিঙ্ক এই প্রতিবেদনে দেওয়া হল, বন্ধুরা শুনে দেখবেন এই শ্রুতিমধুর গান।