রাণীশংকৈল প্রতিনিধিঃ-
ঠাকুরগাওঁয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন গ্রাম পাড়া মহল্লার যোগাযোগ মাধ্যমে এক মাইলফলক অবস্থান সৃষ্টি করেছে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ(এলজিইডি)।
তাদের হিসাব মতে রাণীশংকৈল উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণ এলাকায় এলজিইডির আওতায় নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এবং প্রতি অর্থ বছরেই নতুন নতুন গ্রামের নতুন সড়ক নির্মাণ করার কাজ প্রক্রিয়াধীন থাকছে।
তবে এ সড়কগুলো শুধুমাত্র স্থানীয় যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হলেও সড়কগুলোতে চলছে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলা ভারী ইটভাটার গাড়ী ও সড়কের জন্য ভয়ানক জমি চাষের লোহার রিং সম্বনিত পাওয়ার ট্রিলার। এসব গাড়ীর কারণেই দ্রুত নষ্ট হচ্ছে সড়কগুলো বলে অভিযোগ স্থানীয় ও উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের। সরকারী বিধি উপেক্ষা করে উপজেলা ও পৌরসভা মিলে ২৮টি ইটভাটারসহ এসব গাড়ী এলজিইডির সড়কে চললেও। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় বাধাহীন ভাবে চলছে ইটভাটা ও হালের গাড়ীগুলো। আর স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে নতুন সড়ক নির্মাণের পর সড়কের ভিত্তি মজবুত থাকার নির্দিষ্ট একটি সময় ও ওজন সহ্য ক্ষমতা থাকে। তবে এসব গাড়ীর কারণেই দ্রুত নষ্ট হচ্ছে সড়কগুলো। আর এ কারণেই সড়ক পুণরায় সংস্কারের জন্য আবারো অর্থ বরাদ্দ দিতে হয় সরকারকে।
সম্প্রতি সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন সড়কগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, লেহেম্বা ইউনিয়নের আবাদ তাকিয়া মাদ্রাসা মোড় থেকে বিরাশী বাজার পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণ করার মাস কয়েকের মধ্যেই এসব গাড়ী চলাচলের জন্য নষ্ট হচ্ছে। সেই রাস্তার সন্নিকটে রয়েছে আর বি এস বিক্স নামে ইট ভাটা। এলজিইডি সড়ক ঘেষে ইট ভাটা রয়েছে মীরডাঙ্গী-ভাংবাড়ী সড়ক ঘেঁেষ জিতেন চেয়ারম্যান ও মোস্তাকের ভাটা। তার পাশেই পর্ূব কালুগাঁও রয়েছে ফারুক ও মতির ভাটা।
নেকমদর থেকে কাতিহার সড়ক ঘেঁষা ইট ভাটা রয়েছে আবু শাহীন, আইনুল, নবী ও রুহল আমিনের ইটভাটা। এছাড়াও উপজেলা সংযোগ সড়ক শান্তিপুর কাঠালডাঙ্গী সড়ক ঘেঁেষ রয়েছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আইনুল হক মাষ্টারের ইটভাটা। এদিকে পৌর শহর জুড়ে ইট ভাটা স্থাপনে বাধা থাকলেও পুরাতুন ভাটা হিসাবে এখনো চালু রয়েছে প্রায় চারটি ভাটা।
উল্লেখিত সড়ক ঘেষেঁ ইটভাটাগুলোর গাড়ী অবাধে চলাচলের কারণে সড়কগুলো দ্রুত নষ্ট হচ্ছে বলে দাবী স্থানীয়দের। ভাটা স্থাপন ঘেঁষা সড়ক ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাঝে মাঝেই বড় ট্রাক ইট কিংবা ভর্তি গাছের খড়ি অথবা কয়লার গাড়ী এ সড়কগুলো দিয়ে চলাচল করে। সেই গাড়ী গুলো যখন আরেকটি গাড়ীকে সাইড দিতে যায় ঠিক সে-মহূর্তে সড়কের সাইডগুলোর রেজিংয়ের ইট ভেঙ্গে যায়,কথাও আবার কার্পেটিং সহ ডেবে গিয়ে সড়কে ফাটল ধরে কার্পেটিং নষ্ট হয়ে পড়েছে। এমন সবচেয়ে ক্ষতিগস্ত সড়ক হচ্ছে মীরডাঙ্গী থেকে কালুগাঁও সড়ক। এ সড়কের বিভিন্ন সাইডগুলো ইতিমধ্যে জমি থেকে ভাটার মাটি সংগ্রহ করার সময় সড়কের বিভিন্ন সাইড একেবারে নষ্ট হযে পড়েছে। সড়কটি কথাও কথাও একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ সবি বর্তমানে অবাধে চলাচলরত ইটভাটার গাড়ীগুলোর কারণে।
অন্যদিকে এ প্রতিবদেকের দৃষ্টিতে ধরা পড়া জমি চাষের জন্য পাওয়ার ট্রিলার গুলোর লোহার চাকার কারণেও নষ্ট হচ্ছে সড়কগুলো। অথচ নিয়ম অনুযায়ী হাল দেওয়ার সময় পাওয়ার টিলারে টায়ারের চাকা খুলে লোহার চাকা ব্যবহারের কথা থাকলেও হালের গাড়ীর মালিকরা সেই চাকা লাগিয়েই সড়কগুলোতে চলাচল করে থাকে। এতে ঐ চাকার গাড়ী যে সড়ক দিয়ে চলাচল করে সেই সড়ক গুলো কেঁটে কেঁেট যায়, তাতে কিছুদিন পর ফাটল ধরে সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে।
২৮টি ইট ভাটার অনন্ত দশটি ভাটার শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে গড়ে একটি ভাটাতে প্রতিদিন দিনে রাতে প্রায় বিশবারের অধিক চলাচল করে ভারী যানবাহন। এদের বেশিরভাগ ড্রাইভারের নেই বৈধ লাইসেন্স কিংবা গাড়ী চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ। তারা বেপেরোয়াভাবেও গাড়ী ড্রাইভ করে বলেও জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয় দেবনাথ জানান, উপজেলা জুড়ে জমি চাষের জন্য পাওয়ার ট্রিলার রয়েছে প্রায় এক হাজার পাচঁশত পঞ্চাশটি।
এদিকে ইটভাটার একজন মালিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, নিন্ম-মানের সড়ক নির্মাণের কারণেই দ্রুত সড়ক নষ্ট হচ্ছে। এর জন্য দায়ী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর। আমাদের ভাটার গাড়ীর জন্য এত তাড়াতাড়ী সড়ক বেহাল হওয়ার কোন কারণ নেই। তারা ঠিকাদারদের সাথে আতাত করে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে নিনর্ম-মানের সড়ক নির্মাণের সুযোগ দেওয়ায় সড়কের এমন দশা বলে মন্তব্য তার।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী তারেক বিন ইসলাম বলেন,সড়কে চলাচলের কিছু বিধি-বিধান থাকলেও আমরা তা কাউকে মানাতে পারি না। স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করলে সড়কের কিছুটা এমন ক্ষতি কমানো সম্ভব। ভাটার গাড়ীর কারণে ইতিমধ্যে আমাদের অনেক সড়ক নষ্ট হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন