কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রাম উলিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেষে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত বাঁধে বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙ্গনে ভিটে-মাটি হারিয়ে আশ্রয় নেয়া পরিবারকে বাড়ী সরিয়ে নেয়ার নোটিশ দেয়ায় ওই পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পাউবোর পক্ষ থেকে নোটিশ প্রাপ্তির পর যে সকল পরিবারের সামান্যতম সামর্থ রয়েছে ইতোমধ্যে তারা বাড়ী-ঘর সরিয়ে নিলেও অধিকাংশ পরিবার কোথায় যাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। হতাশা আর দুঃচিন্তায় দিন রাত কাটছে ওই সর্বহারা মানুষগুলো। বাড়ী ভেঙ্গে এই কনকনে শীতে পরিবারগুলো খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করছে। ভূক্তভোগীরা সরকারের নিকট অন্যত্র পূণর্বাসন করার দাবী জানায়।
১৯৭৪ সালের পর কড়ালগ্রাসি ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেষে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ নির্মিত হওয়ার পর থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদে বাড়ি-ভিটে হারা মানুষগুলো ছোট ছোট ঘর তুলে ওই ওয়াপদা বাধে বসবাস শুরু করে। ভিটে মাটি হারা সর্বশান্ত মানুষ গুলো দিন মজুরীসহ নানা পেশার সাথে জড়িত। আবার অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেয়। যাদের সার্মথ্য ছিলো তারা পরবর্তিতে সুযোগ বুঝে অন্যত্র চলে গেছে। নিতান্ত গরীব মানুষগুলোর স্থায়ী ঠাঁই হয় এই ওয়াপদা বাঁধে।এরপর প্রতি বছর নদী ভাঙ্গে আর পরিবারগুলো ওয়াপদা বাঁধের দু পাশের্ব স্লোপ কেটে নতুন নতুন বসতি গড়ে তোলে। ওই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দু’পাশের্ব মানুষদের ঘনবসতী ছিল। কেউ ইচ্ছে করেও এই পরিবেশে থাকতে না চাইলেও নিরুপায় হয়েই তারা সেখানে বসবাস করছিলেন।
নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর, কুড়িগ্রাম পওর বিভাগ,বাপাউবো,কুড়িগ্রাম থেকে স্মারক নং- কুড়ি/পওরবি/ই-২১/৪৩৯৯ তারিখ ১০-১২-২০১৯ খ্রীঃ মারফৎ উলিপুর হাতিয়া ইউনিয়নের বাঁধে বসবাসকারী ২’শ১৪ পরিবারকে নোটিশ দিয়ে ০৭দিনের মধ্যে তাদের বাড়ী-ঘর সরিয়ে নেয়ার নোটিশ দেয়া হয়। কে কোথায় যাবে? নোটিশ পাওয়ার পর থেকে বাঁধে বসবাসকারীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। প্রায় সকলের একই প্রশ্ন কোথায় যাবো?
হাতিয়া ইউনিয়ন ডারার পাড়ে বাঁধে বসবাসকারী জহুরুল হক (৭৫) দিন মজুর বলেন, আটবার নদী ভাঙ্গনের পর এই বাঁেধ আশ্রয় নিয়েছিলাম। অতিকষ্টে একবেলা খেয়ে না খেয়ে হলেও এই আশ্রয় কেন্দ্রটুকু ছিল আজ সেটুকু ছেড়ে দিতে হচ্ছে । আছলাম মেকার (৩২) পাশের্বর বাজারে ছোট ছোট ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি মেরামত করে দিন যাপন করছে। অনেকে আজ ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে আশ্রয় হিসেবে বাঁধে ঝুপড়ী করে বসবাস করে আসছেন এখন তারা কোথায় যাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়ে অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে ভাঁধ রাস্তায়। খয়বার (৫৫), আক্কাছ (৬৫) শমশের (৬৫) এদের অনেককে বাড়ি কোথায় নিয়ে যাবেন জিজ্ঞেস করলে কাঁদে আর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। বাঁেধ আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো এ প্রতিনিধিকে বলেন, কোথায় যাব জানি না,তবে সরকারের হুকুম মানতে হবে। তাদের দাবী সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে অন্যত্র পূর্ণবাসিত করা হউক।
এ ব্যাপারে পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ওয়াপদা বাধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা আছে। বাধটিকে সংস্কার করার প্রয়োজনে বাঁধে বসবাসকারীদেরকে বাড়ী ঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উলিপুরে বেশ কয়েকটি আশ্রয়ন কেন্দ্র ও গুচ্ছ গ্রাম তৈরীর প্রকল্প খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত হবে এবং আরও কিছু প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটা হলে প্রকৃত অসহায় পরিবার গুলিকে সেখানে পূর্ণবাসিত করা সম্ভব হবে।