photos

কচাকাটা থেকে রফিকুল ইসলাম ও নুরে আলম ঃ
মহামান্য আদালত গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট দিলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নারী নির্যাতন মামলার আসামী একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক। দেড় মাস বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হলেও তার হাজিরা খাতায় নিয়মিত উপস্থিতি দেখাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হলেও প্রভাবশালী প্রধান শিক্ষকের কিছুই যায় আসেনা। এ ঘটনা কুড়িগ্রামের কচাকাটা থানা এলাকার বলদিয়া ইউনিয়নের বলদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এদিকে আসামীকে খুজেও পাচ্ছেনা পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বলদিয়া ইউনিয়নের বলদিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক পদে কর্মরত দক্ষিণ বলদিয়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে এরশাদ আলীর সাথে ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা পারভীনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার কর্মস্থলে বিল করতে তার শ্বশুরের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেয় ধার হিসেবে। ছয় মাসের মধ্যে সে টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সে টাকা না দিয়ে আরো দুই লাখ টাকা স্ত্রীর কাছ থেকে যৌতুক দাবী করে টাকা না পেয়ে পরিবারের লোকজনসহ মাহমুদাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে এরশাদ। ২০১৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মাহমুদাকে এরশাদ তার পরিবারের লোকজনসহ বেদম মারপিট করে ঘরের ভিতর তালাবদ্ধ করে রাখে। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে এ বিষয়ে সালিশ বসলে যৌতুকের দুই লাখ টাকা না দিলে তৃতীয় বিয়ে করার হুমকী দিলে চলতি বছরের ১ মার্চ এরশাদ ও তার পিতাকে আসামী করে কুড়িগ্রাম আদালতে নারী নির্যাতন মামলা করে ওই শিক্ষিকা। মামলায় হাজিরা না দিয়ে আদালত অবমাননা করায় এরশাদের বিরুদ্ধে গত ১২ এপ্রিল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। কচাকাটা থানা পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়া পর থেকে আসামী এরশাদকে খুজে পাচ্ছেনা। এদিকে এপ্রিল মাসের মাসিক বিলের প্রতিবেদনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাল স্বাক্ষর করে এরশাদকে নিয়মিত উপস্থিত দেখিয়ে শিক্ষা অফিসে বিল সীট পাঠান। চলতি মাসে একদিনও বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হলেও তার হাজিরায় উপস্থিতি দেখান প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বিএসসি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, গত দেড় মাস থেকে বিদ্যালয়ে আসেন না এরশাদ আলী। তার নির্ধারিত ক্লাশগুলোর কিছু বিষয় ক্লাশ নেন প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বিএসসি। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এরশাদ স্যার দেড় মাস থেকে আসেন না। মাঝে মাঝে তার ক্লাশ হেডস্যার নেয়। এতে সমস্যা হচ্ছে। এতে হতাশ অভিভাবকরাও। সামনে পরীক্ষা। প্রধান শিক্ষকের ছত্রছায়ায় একজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে না আসায় পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে সন্তানেরা। কয়েকজন অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক ইচ্ছে করলে বিষয়টি সমাধান করতে পারেন। তা না করে তিনি পক্ষ নিয়ে হাজিরা খাতায় নিজে সই করিয়ে নিজেও দুর্নীতি করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের দেখা না পেলে কথা হয় সহকারী প্রধান শিক্ষক বনমালী রায়ের সাথে। তিনি বলেন, সে স্কুলে আসছেনা অনেকদিন। কেন আসছেনা। নাকি ছুটিতে আছেন সেটা প্রধান শিক্ষক ভালো জানেন। এ বিষয়ে আমাদের কোন কথা বলা যাবেনা। তবে সে না আসায় সমস্যা হচ্ছে। পরে বাড়িতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বিএসসির সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে তার হাজিরা সই করা হচ্ছে। এটা সবাই করে। তবে এরপর থেকে সে না আসলে অনুপস্থিত দেখানো হবে।
মামলা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা কচাকাটা থানার এসআই আরিফুর ইসলাম বলেন, এরশাদ আলীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। স্কুলে সোর্স লাগানো হয়েছে। সে স্কুলে আসেনা। তার হাজিরায় স্বাক্ষর হয় কিভাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহারুল ইসলাম বলেন, যেহেতু মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নেই। বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন