কবিতা-

একটি মেয়ের উপাখ্যান

রবিউল মাশরাফী

বৃক্ষেরা যেমন করে আঁকড়ে ধরে মৃত্তিকা শরীর

বয়সি স্বামীর বুকে ঠিক তেমনি করেই ছিল সে

পাহাড়ের কোলঘেঁষা ভিন্নতর জীবনের ঘরে

ঘরের অর্ধেক জুড়ে বসবাস সম্মুখে দোকান

ছোট্ট চায়ের দোকান একা একা চালাতো মেয়েটা

দূর বনে নিজেদের ছোট এক আঙুরের ক্ষেত

ক্ষেতে কাজ করে স্বামী মাঝে মাঝে মেয়েটাও যায়

নিঃসন্তান বলে তার অভিতাপ ছিলোনা কখনো।

একদিন তড়িঘড়ি কী জানি কী খেয়ালের বশে

দোকানের ঝাঁপ ফেলে বিকেলের রোদ মেখে গায়ে

দুহাত ছড়িয়ে একা হেলে দুলে ছুঁয়ে বৃক্ষলতা

উচ্ছ্বাস উল্লাসে হেঁসে ফড়িঙের মতো নেচে নেচে

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সিঁথিসরু বনপথ ধরে

সেই দিকে ছুটে চলে যেই দিকে স্বামী আর ক্ষেত।

চুলের পাকানো বেণী দোলে যেন পেন্ডুলাম দোলে

বনের মায়াবী পথ একটু একটু নিলো তারে টেনে

যেমনি করে শিশুদের টেনেছিল হ্যামিলন বাঁশি।

ঘোর কেটে গেলে পর স্বাভাবিকে ফিরে আসে যেই

বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে এই পথ সেই পথ নয়

পাহাড়ের ধোঁয়ামেঘ সান্ধ্যছায়া ঢেকে দিল সব।

কালো ভালুকের মতো নিঃশব্দের রাত্রি নামে এক

নক্ষত্রেরা মরে গেল সেই রাতে চাঁদ দেয়নি আলো

জোনাকিরা আসে নাই মেঘ বনে দেহবাতি জ্বেলে

জানেনা পথের মাপ ঘূর্ণিপাকে আধার দুর্যোগে

বুঝিবা মেয়েটা কেঁদেছিল খুব ! শোনে নাই কেউ

ক্লান্তিহীন ঘুরে ঘুরে রাত্রিশেষে মেলে তার খোঁজ

যেভাবে ক্ষুধার্ত বাঘ প্রাণীদের কামড়ে ধরে মেরে

মাংসের আহার শেষে রেখে যায় উচ্ছিষ্ট কঙ্কাল

সেই কঙ্কালের মতো পড়েছিল বনের ভিতর

পশুর কবলে পড়া মেয়েটার রক্তমাখা লাশ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *