নাজমুল হুদা পারভেজ –
কমিউটার ট্রেন কি বাহে? পয়লা তারিক থাকি নাহি চিলমারী -অংপুর যাওযা-আইস্যা কইরবে ? নোকাল-মেইল কি ট্রেন হয় হউক, হামার এডে টেন চললেই হই’ল, কম ট্যাকায় হামরা অংপুর যাবার পামো কিনা সেডায় হামাক বুঝি কন?- জানতে চায় চিলমারীর এক দিন মজুর মোঃ সালাম মিঞা (৫৫)। ১লা মার্চ ২০২২ ইং থেকে চিলমারী কমিউটার – ১ নামে একটি ট্রেন রংপুর টু চিলমারী এবং চিলমারী থেকে রংপুর চলাচল করবে মর্মে এলাকায় মাইকিং শোনার পর থেকে এ উপজেলার প্রায় সকল-শ্রেণি পেশার মানুষের একটিই প্রশ্ন কমিউটার ট্রেন কি?
এই প্রশ্নের উত্তর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে বুঝে দিতে হচ্ছে। সংগত কারণে সলিম মিঞার প্রশ্নের উত্তরে বলতে হল, কমিউটার ট্রেনের আরেক নাম ডিজেল ইলেক্টিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডিইএমইউ ট্রেন। উভয় পার্শ্বে ইঞ্জিন চালিত এসব ট্রেনের মধ্যেই ডিজেল হতে বিদ্যুৎ তৈরি হয়। আর ঐ বিদ্যুৎতেই চলাচল করে ট্রেনটি।এটা দ্রুতগামী
ও অত্যাধুনিক একটি ট্রেন। কমিউটার ট্রেনে মোট ৩০০ যাত্রী ভ্রমণের সুযোগ আছে। তন্মধ্যে ১৫১ জন সিটে বসে এবং বাকি ১৪৯ জন দাঁড়িয়ে যেতে পারবে।
কুড়িগ্রাম জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে পাকিস্তন সরকার কুড়িগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে চিলমারী পর্যন্ত ২৮.৫৫ কিলোমিটার কুড়িগ্রাম টু চিলমারী ব্রডগেজ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করে এবং ১৯৬৭ সালে কয়লা চালিত রেল ইঞ্জিন কয়েকটি বগি নিয়ে যাত্রা শুরু করে। চিলমারী ইউনিয়নের দিয়ারখাতা এলাকার চাকলীড় পাড় এলাকায় চিলমারী রেল ওয়ে ষ্টেশন নামে একটি রেল ষ্টেশন স্থাপিত হয়েছিল এবং ট্রেন কুড়িগ্রাম থেকে চিলমারী নিয়মিত যাতায়াত করছিল। চিলমারীর প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক আ’লীগ নেতা মোঃ দেলওয়ার হোসেন মাষ্টার সাহেব এ প্রতিনিধিকে জানান, ১৯৭০ ইং সালের পূর্বেই ব্রহ্মপুত্র নদী ভাঙ্গন শুরু হয় এবং ক্রমান্বয়ে চিলমারী রেলওয়ে ষ্টেশনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ১৯৭১ইং সালে যুদ্ধকালীন সময় রেল ষ্টেশনটি ভেঙ্গে যায় এবং ট্রেন রমনা রেল ষ্টেশন পর্যন্ত চলতে থাকে।গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এ রুটে লোকাল ট্রেন চলাচল। ফলে এ অঞ্চলের হত দরিদ্র মানুষ গুলি স্বল্প মুল্যে ট্রেনে চলাচলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। ।সম্প্রতি দুই বছর পর আবারও চিলমারী-কুড়িগ্রাম হয়ে রেলপথে চলাচলকারী ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলকর্তৃপক্ষ। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসছে ১ মার্চ থেকে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল আবার নতুন করে শুরু হতে যাচ্ছে য।এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে, লালমানিরহাটের ডিভিশনাল ট্রাফিক সুপারিটেনডেন্ট খালিদুন নেছা।তিনি জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে রমনা-কুড়িগ্রামম রেলপথে চিলমারী কমিউটার ট্রেন-১ চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে । তবে এখনও শিডিউল চূড়ান্ত হয়নি। তবে রেলপথ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, নতুন চালু হওয়া কমিউটার ট্রেনটি বিকেলে লালমনিরহাট থেকে কাউনিয়া আসবে। পরে কুড়িগ্রাাম-কাউনিয়া-রমনা এবং সকালে রমনা-কুড়িগ্রাম-কাউনিয়া হয়ে রংপুর-লালমনিরহাট রেলপথে যাতায়াত করবে।
১লা মার্চ থেকে চিলমারী কমিউটার-১ নামে একটি ট্রেন চালু করা হচ্ছে নিশ্চিৎ করে এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ জানান, কমিউটার ট্রেনে অধ্যাধুনিক সকল ব্যবস্থা থাকবে। চিলমারী থেকে রংপুর পর্যন্ত বাস ভাড়া থেকে এই ট্রেনের টিকিট ভাড়া আনেক কম হবে, তবে পূর্বে যে সকল লোকাল ট্রেন এই লাইনে চলাচল করেছে , সেই সকল ট্রেনের টিকিট মূল্য যা ছিল, তা থেকে একটু বেশী হবে।
চিলমারী কমিউটার ট্রেন-১ নামে ট্রেনটির নামকরণ করায় প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রেল র্কতৃপক্ষকে অভিন্দন জানিয়েছেন চিলমারী উন্নয়ন নাগরিক কমিটির সভাপতি মোঃ রহিমুজ্জামান সুমন, সেক্রেটারী সহঃ অধ্যাপক নাজমুল হুদা পারভেজ ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ আকতারুজ্জামান আসিব সহ চিলমারীর দলমত নির্বিশেষ সকল জনগণ।