কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অসহায়দের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করছেন কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ যোদ্ধারা। করোনার দুর্যোগকালীন ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহর-দুর্গম চরাঞ্চলে দিনে কিংবা রাতে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এই সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। সাহসী এই যোদ্ধারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একদিকে জনসমাগম রোধে কাজ করার পাশাপাশি পরিবারকে সময় না দিয়ে অসহায় পরিবারে খাদ্য ঘাটতি না হয় সেজন্য খাদ্য সামগ্রি পৌঁছে দিতে পেরে খুশি করোনা মোকাবেলার সম্মুখ এই যোদ্ধারা।

দারিদ্রপীড়িত খ্যাত জেলা কুড়িগ্রাম। এখানে ১৬টি নদ-নদীতে প্রায় সাড়ে ৫শতাধিক চরাঞ্চলে প্রায় ৫লাখ মানুষের বসবাস। প্রতি বছরই বন্যা আর নদী ভাঙ্গনে করাল গ্রাসে ঘরবাড়িসহ সম্পদ হানি হয়ে নি:স্ব হয় শত-শত পরিবার। কৃষি নির্ভরশীল জেলায় শিল্প কলকারখানা না থাকায় মানুষের হাতে সারাবছর কাজকর্ম থাকে না। জীবন-জীবিকার তাগিদে ছুটে চলতে হয় ঢাকা,সিলেট,কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর করোনার থাবায় জীবিকার উপরে মারাত্নক প্রভাব পড়ে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী,শ্রমিক,দিন এনে দিন খাওয়া উপার্জনক্ষমকারীরা পরিবার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। একদিকে সারাবছরের কাজের সুযোগ না থাকা অন্য দিকে করোনার কারণে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত পেশার মানুষজনসহ নিম্ন এবং মধ্যবিত্তরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। দুর্যোগকালিন সময়ে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কখনো গাড়িতে আবার কখনো পায়ে হেঁটে এসব অসহায় মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রি পৌঁছে দিচ্ছেন কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের যোদ্ধারা। করোনা সংক্রণের রোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষের খাবারের যেন সংকট না হয় সেজন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দিনে কিংবা রাতে ছুঁটে যাচ্ছেন মানুষের দৌঁড় গোড়ায়। অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিলেও মধ্যবিত্ত অসহায় পরিবার গুলো লোক লজ্জার সংকোচের কারণে সহযোগিতা নিতে পারেন না। তাদের কথা ভেবেই কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোবাইলে,এসএমএস,ফেসবুক এবং ম্যাসেঞ্জারে তথ্য দিলেই পুলিশ যোদ্ধারা তাদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রি। শুধু মাত্র শহর-গ্রামের মানুষ নন দুর্গম চরাঞ্চলবাসীও এই সুযোগ পাচ্ছেন। আইন শৃংখলা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুলিশের এই ব্যতিক্রম কাজে জেলাবাসীর মধ্যে আস্থার প্রতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ।

ত্রাণ পাওয়া উপকারভোগী পৌর এলকার বাসিন্দা মজিবর রহমান(৫৫), আছমা বেগম(৪৫) আফজাল হোসেন (৪০) জানান,সরকারিভাবে অনেকেই ত্রাণ দিচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোন ধরনের সহযোগিতা পাইনি। লোকলজ্জার কারণে লাইনে গিয়ে ত্রাণ নিতেও সংকোচ লাগে। হঠাৎ জানতে পারি পুলিশ সুপারের সাথে ফোনে কথা বলে নাম ঠিকানা দেই। সেদিনেই মধ্যরাতে কয়েকজন পুলিশ বাড়িতে ডাক দেন। উঠে এসে কারণ জানতে চাইতেই ওরা এসপি স্যারের পক্ষ থেকে চাল,ডাল,আটা,তেল,আলু,লবণ,সাবানসহ একটি বস্তা তুলে দেয় আমার হাতে। প্যাকেটটি পাওয়ার পরে আমার চোখ দিয়ে পানি এসে পড়ে। সত্যি আমি বুলতে পারবো সেই অনভূতিটা কেমন ছিল। এরপর কথা হয় যাত্রাপুরের পোড়ার চরের বাসিন্দা আকবর আলীর জানান, সহযোগিতা চেয়ে এসপির নম্বরে এসএমএস করেছিলাম। খুব একটা আশা ছিলনা। কেননা চরের মধ্যে থাকি কে আর খোঁজ নেবেন। পরের দিন আমাকে ফোন দেয় পুলিশ। গিয়ে দেখি এসপি স্যারের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রির একটি প্যাকেট আমার হাতে তুলে দেয়।

এটিএসআই কামরুজ্জামান,ইন্সপেক্টর সুমন জানান,করোনার প্রভাবে কারণে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে পেরে খুশি আমরা। প্রতিদিন রাতে তারাবির শেষে ৮/১০জনের একটি টিম নিয়ে এসপি স্যারসহ খাদ্য সামগ্রি নিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সেগুলো পৌঁছে দেই। সহযোগিতা পাওয়া মানুষের মুখে হাসি দেখে আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই ভুলে যাই।

পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, জেলা পুলিশের ব্যক্তিগত উদ্যোগ প্রায় দু’মাস ধরে চাল, ডাল, আটা, তেল,লবণ,আলুসহ বিভিন্ন পণ্য দিয়ে একটি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। জেলার ১১টি থানায় নিরাপত্তা দেবার পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে হরিজন সম্প্রদায়,দলিত সম্প্রদায়,শ্রমিকসহ প্রায় ০৪ সহস্রাধিক পরিবার ছাড়াও ফেসবুক,ম্যাসেঞ্জার,এসএমএম এবং ফোন কলের মাধ্যমে এক হাজার মধ্যবিত্ত পরিবারকে খাদ্য সামগ্রি দেয়া হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব যতদিন থাকবে ততদিন জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এই সহায়তা চালু থাকবে বলে জানান তিনি।#

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন