রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে রাতের আঁধারে বিগত বছরের উদ্বৃত্ত সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রায় এক মাস আগে প্রতিষ্ঠানের স্টোর রুম থেকে ট্রলি ভর্তি সরকারি বই বিক্রির ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে বলে তদন্ত কমিটি জানিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক কর্মচারীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ সরকারি বই বিতরণের পর উদ্বৃত্ত বই কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেওয়ার বিধান থাকলেও সাবেক অধ্যক্ষ ও সহকারী শিক্ষক যোগসাজসে তা বিক্রি করেছেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জহুরুল হক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। এভাবে সরকারি বই বিক্রির কোনও এখতিয়ার প্রতিষ্ঠান প্রধানের নেই। ইতোমধ্যে বিক্রিকৃত কিছু বই জব্দ করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক জানান, গত এক মাস আগে রাতের আধাঁরে সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম সরদার স্টোর রুম থেকে গত বছরের উদ্বৃত্ত বই বের করে বিক্রি করেন। এ সময় দায়িত্বরত নৈশ প্রহরী তাকে প্রশ্ন করলে তিনি অধ্যক্ষের নির্দেশনার কথা বলে স্টোর রুম থেকে বই বের করে কাগজ বিক্রেতা হান্নানের কাছে হস্তান্তর করেন। হান্নান একটি ট্রলিতে করে প্রায় ৫ মণ বই স্কুল থেকে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাগজ ব্যবসায়ী হান্নান কিছু বই বিভিন্ন মুদি দোকানে বিক্রি করেন। অবশিষ্ট বই তিনি শহরের পুরাতন রেল স্টেশনের কাছে রুবেল নামে এক কাগজ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। সেসব বই কেনার কথা স্বীকারও করেছেন হান্নান ও রুবেল। রুবেলের দোকানে গিয়ে কিছু সরকারি বই পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষক বলেন, ‘রাতের আঁধারে বিগত বছরের প্রায় দুই থেকে আড়াইশ সেট বই বিক্রি করা হয়েছে। সেগুলো ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বই ছিল। প্রতিবছর চাহিদার চেয়ে বেশি বই নেওয়া হয়। অধ্যক্ষ উদ্বৃত্ত বই ফেরত দেন না, বিক্রি করে দেন। শুধু বই বিক্রি নয়, শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষার ফি’র নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে তাও আত্মসাত করেন অধ্যক্ষ’।
প্রতিষ্ঠানটির নৈশ প্রহরী কাদের বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম সরদার কাগজ ব্যবসায়ী হান্নানকে সাথে নিয়ে এসে স্টোর রুম থেকে এক ট্রলি বই বের করে নিয়ে যান। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ ম্যাডাম নিয়ে যেতে বলেছে। আমি আর কিছু জানি না।’
কাগজ ব্যবসায়ী হান্নান বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে আমি প্রায় তিন মণ বই কিনে নিয়ে সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। আর কে কে বই নিয়ে গেছে সেটা জানি না।’
এ বিষয়ে খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘অধ্যক্ষ ম্যাডামের নির্দেশে কিছু কাগজপত্র বিক্রি করেছিলাম। এ বিষয়ে ম্যাডামের সাথে কথা বলুন।’
তবে সাবে অধ্যক্ষ রিতা রাণী দেবের দাবি, শুধু পুরাতন কাগজপত্র ও কিছু গাইডবই বিক্রি করা হয়েছে। সেখানে সরকারি বই ছিল না। বিদায়ের আগ মহূর্তে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়, যা বিদায়ের পর তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে । তিনি বলেন, ‘অনেক বছর ধরে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। এতদিন কোনও সমস্যা হয়নি। এখন বিদায়ের পর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি সরকারি বই বিক্রি করিনি।’
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জহুরুল হক বলেন, ‘কোনও প্রতিষ্ঠানে বিতরণের পর উদ্বৃত্ত বই থাকলে
বই থাকলে তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ফেরত দিতে হয়। উপজেলা কমিটির মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া সরকারি বই বিক্রির কোনও বিধান নেই। প্রতিষ্ঠান প্রধান বিধি বহির্ভূত কাজ করেছেন। সম্প্রতি ঘটনাটি জানার পর আমরা কিছু বই জব্দ করে প্রতিষ্ঠানে ফেরত এনেছি। ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসেদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।’
অপরদিকে খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজে রাতের আঁধারে বিগত বছরের উদ্বৃত্ত সরকারি বই বিক্রির অভিযোগের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে রয়েছে যথাক্রমে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার আবুল বাশার ওবায়দুল্লাহ, উপজেলা সমবায় অফিসার আব্দুর রাজ্জাক এবং উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মিজান জানায়, অভিযোগের ঘটনায় চলতি সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।