কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
নদ-নদীর পানি কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। এতে প্রবল বন্যা দেখা না দিলেও থেমে নেই ভাঙন। এই চিত্র কুড়িগ্রামের।
জেলায় তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের ভাঙনে এবার সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে হারিয়ে গেছে। ঝুঁকিতে আছে আরো ১৫টি স্কুল ও মাদরাসা। ভাঙনের কবলে পড়া স্কুলগুলোর মালামাল পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। ফের স্কুল ভবন নির্মাণের মতো কোনো জমিও মিলছে না। সব মিলিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক আর শিক্ষার্থীরা বেশ দুশ্চিন্তায় আছে।
জানা যায়, উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন এবং থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার, দালালপাড়া, হোকডাঙ্গা ও ডাক্তারপাড়া গ্রামে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কারণে পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চেরাগের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বগুলাকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে হারিয়ে গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিস্তার ভাঙনে শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
হুমকির মুখে পড়েছে গোড়াই পিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রতিদেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজারহাটের খিতাবখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোড়াই পিয়ার তিয়ারী দাখিল মাদরাসা ও ঠুটা পাইকর হাইস্কুল। এ ছাড়া দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক, বাঁধের রাস্তাসহ সাতটি গ্রামের কয়েক শ একর আবাদি জমিও ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।
উলিপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাদিরুজ্জামান জানান, ‘এ বছর বিলীন হওয়া তিনটি স্কুল পুনর্নির্মাণের জন্য স্থানীয়ভাবে জমি খোঁজা হচ্ছে।’
এ ছাড়া রৌমারীর ফলুয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘুঘুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্কুলের মালামাল সরিয়ে খোলা আকাশের নিচে রেখে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৮ জুলাই তিস্তার ভাঙনের মুখে পড়ে চর গতিয়াশাম বগুড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জমি না পাওয়ায় স্কুল ভবন পুনর্নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে ধরলা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে সদর উপজেলার ছাট কালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর জানান, বিষয়টি বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তারা কিছু বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তা কার্যকর না হওয়ায় স্কুলটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অভিভাবক একরামুল হক বলেন, ‘নদী থেকে স্কুলের দূরত্ব মাত্র ১০ মিটার। স্কুলটি ভেঙে গেলে এই চরে আর স্কুল হবে কি না সন্দেহ আছে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন জানান, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড স্কুলটি রক্ষার চেষ্টা করছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভাঙনের শিকার হলে পুরনো ভবনটি ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।’
অন্যদিকে রাজারহাট উপজেলার খিতাবখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিস্তা নদীর দূরত্ব মাত্র ১০০ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে স্কুলটি রক্ষায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হলেও প্রবল স্রোতে তা ভেসে গেছে। যেকোনো সময় স্কুলের দ্বিতল ভবনটি ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ভাঙনে বিলীন স্কুলগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য স্থানীয়ভাবে জমি নির্ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনের মুখে পড়া স্কুলগুলো রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, স্কুল রক্ষার্থে কয়েকটি স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ, জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। কয়েকটি স্কুল ঝুঁকিমুক্ত করাও সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।