হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম :
বয়স ১১৯ ছুঁই ছুঁই। যে বয়সে মানুষ বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গোণেন। সেই বয়সে তিনি এখনো হেঁটে চলেন। কোন ঔষধ খেতে হয় না তাকে। নিয়মিত ফজরের নামাজের পর খালি চোখে কোরআন শরীফ তেলোয়াত করেন। শতবর্ষী এই মানুষটি এখন কুড়িগ্রামে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান এনডিসি দেখা করলেন শতবর্ষী এই যুবকের সাথে। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন, কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আলেয়া খাতুন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড: মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু প্রমুখ।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহ: রাশেদুল হক প্রধান এই বয়োবৃদ্ধকে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন সচিবের মাধ্যমে তাকে অর্থসহায়তা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।
শতবর্ষী জোবেদ আলী জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ১৯০০ সালের ২৫ অক্টোবর হলেও তার বয়স আরো বেশি হবে। বাড়ী কুড়িগ্রামের রাজারহাট সদর ইউনিয়নের মেকুরটারী তেলীপাড়া গ্রামে। বাবা মৃত: হাসান আলী। স্ত্রীর নাম ফয়জুন নেছা (৮৭)। ব্যক্তিগত জীবনে ৩পুত্র ও ৪কন্যার জনক তিনি। আলাপচারিতায় জোবেদ আলী জানান, যুবক বয়স থেকে তিনি নিজস্ব দীঘির মাছ, বাড়ীতে পালিত পশুর মাংস, দুধ, ডিম খেতেন। আবাদী জমির ধানের ভাত,খাঁটি ঘি, সরিষার তেল, রাসায়নিক ও সার বিহিন শাক-সবজি উৎপাদন করে সেটাই খেতেন। এই বয়সে ছোট-খাটো সর্দি-জ¦র ছাড়া বড় ধরণের কোন রোগ-ব্যাধি তার হয়নি। তিনি শতবর্ষ আগে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন বলে জানান। স্পষ্ট উচ্চাড়ণে তিনি কোরআন শরীর পড়েন। পত্রিকা ও বইও পড়তে পারেন। রাতে তিনি কুপি জ্বালিয়ে কোরআন মজিদ পড়তে তার খুব ভাল লাগে। তিনি আরো বলেন, কোনদিন ফজরের নামাজ ক্বাজা করি নাই এবং ফজরের নামাজের পর কুরআন তেলোয়াত করি। তাই হয়তো আল্লাহ্ পাক আমাকে সুস্থ রেখেছেন। এজন্য আল্লাহ্র কাছে লাখো শুকরিয়া। এছাড়াও পত্রিকা পড়াই তার এখন প্রধান নেশা বলে জানান।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান এনডিসি জানান, ‘ব্যক্তি জীবনে অনেক প্রয়োজনীয় কাজের ভীরে আমরা প্রবিণ এই মানুষগুলোকে তেমন একটা গুরুত্ব দেইনা। কিন্তু এই প্রবিণ মানুষগুলিই এক সময় সংসারে প্রাণপাত করে সন্তানদের মুখে খাবার জুগিয়েছেন। মিটিয়েছেন সমস্ত আবদার। কিন্তু বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের দিকে তাকানোর যেন কারো সময় হয় না। পারিবারিক মুল্যবোধ তৈরী, সামাজিক নীতি নৈতিকতা, মানবিক আচরণই পারে নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরী করে দিতে।