চিলমারীতে প্রয়াত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের শোক সভায় অবশেষে বক্তব্য দেয়া হলো না একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের
সিনিয়র ষ্টাফ রির্পোটার ঃ-
শোক সভায় বক্তব্য রাখার জন্য অনুষ্ঠানের সঞ্চালক স্থানীয় একটি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নাম ঘোষণা করলেন । তিনি বক্তব্য দেবার জন্য দর্শকের সারি থেকে উঠে ডায়াসেও চলে এলেন। কিন্ত একজন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সংশ্লিষ্ট কলেজের গর্ভানিং বডির একজন সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতার তীব্র বিরোধিতার মুখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আর বক্তব্য দেয়া হলো না। ফিরে যেতে হলো নিজের আসনে। ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায়।

গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা পরিষদের পরপর ৫বারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম স্মরণে শোক সভা ও দোয়া মহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সরকারি কর্মকর্তা, আ’লীগ নেতৃবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা পর্যায়ক্রমে বক্তব্য রাখছিলেন। তখনও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মঞ্চে উপস্থিত হননি। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে শোক সভায় বক্তব্য চলছিল।

শোক সভার প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন এমপি, তখন পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলায় আরেকটি জরুরী সভায় ছিলেন। এমতাবস্থায় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এসএম নুরুল আমিন সরকার বক্তব্য রাখার জন্য চিলমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যস্থ জীতেন্দ্র নাথ বর্ম্মণকে মঞ্চে আহŸান করেন। ঘোষণার পরপরই তিনি তার আসন ছেড়ে বক্তব্য রাখার জন্য ডায়াসে চলেও আসেন।

এ সময় থানাহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থানাহাট ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মিলন এবং চিলমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজের গর্ভানিং বডির সম্মানিত সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ চিলমারী উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আশরাফুল ফরিদ উক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথেরে বক্তব্য প্রদানে বাধা দিয়ে শোক সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগ করে বলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম শুধু চিলমারী উপজেলা পরিষদের ৫বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যানই ছিলেন না । তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ চিলমারী উপজেলা শাখার সভাপতি ছিলেন এবং একই সাথে চিলমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজের গর্ভানিং বডির সভাপতিও ছিলেন। তার মৃত্যুর পর উক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের গর্ভানিং বডির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেননি, সভাপতির পদটি শুন্য ঘোষণা করেননি, এমনকি মরহুমের মৃত্যু সনদ না জমা দিয়েই, রাতের আঁধারে নিজে নিজেই গর্ভানিং বডির সভাপতি নির্বাচিত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা পাশ করে এনেছেন। তার এহেন কার্যক্রম মরহুমের আতœাকে অপমান করার শামিল। সুতরাং তিনি বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম সাহেবের শোক সভায় বক্তব্য দেয়ার যোগ্যতা রাখেন না। অবশেষে তীব্র বিরোধিতার মুখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র নাথ বর্ম্মণের আর বক্তব্য রাখা হয়নি।

এই ঘটনার পরপরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন এমপি শোকসভায় উপস্থিত হন। প্রধান অতিথির বক্তব্যের পূর্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের চিলমারী উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ জাকির হোসেন, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জামিনুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফা রঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আশরাফুল ফরিদ, থানাহাট ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও থানাহাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ রাশিদুল ইসলাম, কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষান দাস , চিলমারী মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ আতিকুর রহমান ,চিলমারী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম, থানাহাট বণিক কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান আলী, মরহুমের স্ত্রী খালেদা শওকত, বড় ছেলে সাইফুল্লাহ শওকত জীবন প্রমুখ। পরে মরহুমের আতœার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

উল্লেখ্য, মরহুম শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম ঢাকার একটি হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২২আগষ্ট ভোর ৫টায় ইন্তেকাল করেন। তিনি ৫ম বারের মতো চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তিনি চিলমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। শোক সভায় উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *