বিশেষ প্রতিবেদন
ঈদের দিন গোটা কুড়িগ্রাম শহরের বাসিন্দারা নিজ পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছে, ঠিক সেই সময় শহরবাসীকে নিরাপত্তা দিতে কাজ করছেন জেলার পুলিশ সদস্যরা। তাদের পরিবার-পরিজন থাকতেও পরিবারহীন তারা। তাদের বক্তব্য একই রকমের, দেশের জন্য কাজ করতেই তাদের এই আত্মত্যাগ। কোনো না কোনো উৎসবে বরাবরের মতো এই বাহিনীর কোনো না সদস্যের দায়িত্ব পালন করতে হয় এই সময়ে। লক্ষ্য একটাই মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা দেওয়া। আর নিজের পেশাদারিত্ব রক্ষা করা।
কুড়িগ্রামের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ধরলা ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে চলছে সীমিত পরিসরে ঘোরাঘুরি। অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও পুলিশ তাদের বারবার তাগাদা দিচ্ছে মাস্ক পরতে। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন চলাচলে করছে যানজট নিরসন।
দুপুরের তপ্ত রোদে এখানে দায়িত্ব পালন করছেন কুড়িগ্রাম সদর থানার এসআই প্রলয় কুমার বর্মা। তার পরিবার থাকে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায়। গতবারের মতো এবারও তিনি ঈদ করছেন পরিবার ছাড়া। থানায় দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে তিনি যোগ দিয়েছেন ডিউটিতে।
কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, এ রকম উৎসবের দিনে পরিবারের কথা সবার মনে পড়ে। পরিবারের সঙ্গে সবারই থাকতে ইচ্ছা হয় আমারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে কাজ করছি মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে দেশের জনগণের জন্য সে জন্য ছুটির প্রয়োজন হয়নি। সরকারি নির্দেশনা আছে তাই আমরা সেই নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। সময় সুযোগ হলে আমি পরবর্তীতে ছুটি নিতে পারব।
তিনি আরো বলেন, শুধু আমি নই আমার মতো অনেকেই আছে যারা পরিবার ছাড়া ঈদ করছে। এটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয় প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন তা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
কথা হয় কুড়িগ্রাম সদর ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত সার্জেন্ট মো. সোলায়মানের সঙ্গে তিনি ঈদ করছেন পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে। তবে ঈদের দিন থাকতে হচ্ছে তাকে রাস্তায়, কাজ করতে হচ্ছে যানজট নিরসনে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা স্টেশন ত্যাগ করিনি, এখানে ঈদ করতে গেলে ভালো-মন্দ দুটোই আছে। কুড়িগ্রামে যেহেতু একটি মাত্র বিনোদনকেন্দ্র বলা চলে সদর এলাকায় সেটি হচ্ছে ধরলার পাড়ে। বিকেল থেকে এলাকায় মূলত যানজট বেশি হয় তাই আমরা এখানে আছি যানজট নিরসনের জন্য পাশাপাশি আমরা জনগণকে বলছি মাস্ক পরতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে।
সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদর থানায় ঈদের দিন দেখা যায় এক অন্য রকম পরিবেশ। ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা করছে তাদের ডিউটি। পাশাপাশি যেসব পুলিশ সদস্য হন ডিউটিতে নেই তারা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছে থানায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করতে। এক টেবিলে মধ্যাহ্ন ভোজ করছেন সবাই।
কথা হয় কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কুড়িগ্রামবাসীর নিরাপত্তার জন্য কাজ করছি। ঈদের জামাত যাতে মুসল্লিরা সুষ্ঠুভাবে করতে পারে। সে জন্য আমরা ১৩টি মসজিদে আমাদের ফোর্স মোতায়েন করেছি। আমাদের চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ সদস্যরা আছে।
ঈদের দিনেও ডিউটি করতে কেমন লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে আমি সার্ভিসে আছি শুরুর দিকে খারাপ লাগলেও এখন তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। বাড়িতে বাবা-মা আছে ঈদ শেষ হলে ছুটি পেলে তাদের সঙ্গে দেখা করব।
কথা হয় কুড়িগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরার সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, পরিবার ছাড়া ঈদ করতে অনেকেরই খারাপ লাগে। আমার ফোর্স আমার পরিবার আমি তাদের সঙ্গে ঈদ করছি। আমরা কাজ করছি আমজনতার স্বস্তির জন্য। আমরা সব পুলিশ সদস্যরা এখানে পরিবারের মতোই থাকি।
তিনি আরো বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এবার আমাদের কোনো পুলিশ সদস্যকে থানা ত্যাগ করতে দেয়নি, তারা কাজ করছে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের চারটি পয়েন্টের চেকপোস্ট রয়েছে, যাতে দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে না পারে আমাদের প্রতিদিন টহল চলছে বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম পুলিশ কাজ করছে মাদক, জুয়া, আত্মহত্যা নিয়ন্ত্রণে। আমি কুড়িগ্রাম জেলাকে মাদকমুক্ত জেলা হিসেবে দেখতে চাই।