নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
নানা অপকর্ম ও নারী কেলেংকারীর ঘটনায় জনবিচ্ছিন্ন ও জনসমর্থন হারিয়ে অবাঞ্ছিত হলেন বাগমারা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। বাগমারায় তাঁর জনসমর্থন শূন্যে কোটায় এসে পৌছেছে।একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।
শনিবার ( ১ জুলাই) বাগমারা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর থেকে আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ থেকে এমন অভিযোগ তোলা হয়। তবে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ বললেও ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের অনুসারীরা ছিলেন গুটিকয়েকজন। পুলিশের সর্তক অবস্থানের কারণে সেখানে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জানা যায়, রাজশাহীর বাগমারায় পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। একটি অংশের সমাবেশ থেকে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ-সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য অংশের সমাবেশ (ইঞ্জিনিয়ার এনামুলের সমর্থকরা) থেকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারাসহ আরও কিছু নেতাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ বাজারে শনিবার বেলা দেড়টার পর শুরু হয়ে দুটি সমাবেশই চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দুই সমাবেশের মাঝখানে পুলিশ অবস্থান নেন এবং দুটি সমাবেশকে সতর্ক পাহারায় ঘিরে রাখেন।
উপজেলার ডাকবাংলা চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের আয়োজনে ঈদ পূর্ণমিলনী সমাবেশ আয়োজন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ। এতে সংগঠনের উপজেলা সভাপতি জিয়াউদ্দিন টিপুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত হন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা। উপস্থিত ছিলেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ রাজশাহী জেলা ও বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় অংশের এই সভায় রয়েছেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য পদ প্রত্যাশী চারজন। মূলত বাগমারার এমপি এনামুলের নানা অপকর্মের কারণে এলাকায় তিনি এবার জনবিচ্ছিন্ন। তাই তাঁর স্থলভিত্তিক হতে পদ প্রত্যাশী সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন।
সমাবেশ থেকে বক্তারা এমপি এনামুলের নানা অপকর্ম তুলে ধরে বক্তব্য দেন এবং আগামীতে যাতে তাকে মনোনয়ন না দেওয়া হয় সেই দাবি করেন। এমনকি পুরো বাগমারাতে এনামুলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাকে বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। দলীয় নেতাকর্মীরা যেন তার সঙ্গে আর কোনো সহযোগিতা না করেন সে কথাও বলা হয়। অন্যদিকে এমপি এনামুলের অনুসারীরা তৎক্ষনাৎ উক্ত সমাবেশ শুরুর কিছুক্ষণ পর ডাকবাংলো চত্বর থেকে কয়েকশ গজ দূরে শহিদ মিনার চত্বরে তড়িঘড়ি করে পালটা সমাবেশ শুরু করেন। এনামুলের গুটিকয়েক অনুসারী তড়িঘড়ি করে সমাবেশ শুরু করতে গিয়ে ভুলে জুতা পরেই শহিদ মিনারে উঠে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। সেখানে তারা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের ঈদ পূর্ণমিলনী সমাবেশ ঘীরে নানা বাজে বাজে কথা বার্তা বলতে শুরু করেন। পরিবেশ উত্তপ্ত করতে দুই সমাবেশ থেকে চলে কাঁদাছুড়াছুড়ি। এনামুলের অনুসারীর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দিন আগা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও তাহেরপুর পৌর মেয়র কালাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকিরুল হক সান্টুসহ এমপি পদ প্রত্যাশী আরও কয়েকজন নেতাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
এ সময় পদ প্রত্যাশী চারজন বলেন, আমাদের সমাবেশে তিন হাজার নারী পুরুষ অংশ গ্রহণ করেছেন। তারা এক দুশ মানুষ নিয়ে সমাবেশের নামে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। বাগমারাবাসী আর নারী লোভী এনামুলকে আর চায় না। হটাও এনামুল, বাঁচাও বাগমারা স্লোগানে এখন মুখরিত বাগমারা। ঐক্যবন্ধ হয়েছে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে বাগমারাবাসী এখন নানা অপকর্মে জড়িত এমপি এনামুলকে চায় না। তারা জেনে গেছে এমপি এনামুলে অপকর্ম।
বাগমারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘উভয় পক্ষই কাছাকাছি স্থানে সমাবেশ করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হয়েছে।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, আমিসহ জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী সমাবেশে গিয়েছিলাম। সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এটা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের ঈদ পূর্ণমিলনী সমাবেশ ছিলো। এর বাহিরে আমি কিছু বলতে পারবো না।
কথা বলতে এমপি এনামুলকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।