মোঃ মনির হোসেন ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠিতে বৃক্ষ রোপণের মৌসূম ঘন বর্ষাকে উপেক্ষা করে সাপ্তাহিক গাছের চারা বিক্রির হাটে বেচাকেনা জমে উঠেছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শহরের বাসন্ডা সেতুর ঢালে সাপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার শহর কেন্দ্রীক দুটি হাটে সকাল থেকেই নার্সারী ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের পদচারনায় মুখরতি হয়ে ওঠে। পাশাপাশি ঝালকাঠি বন বিভাগ থেকেও বৃক্ষ প্রেমীরা প্রতিদিন বিভিন্ন্ প্রজাতির চারা কিনে রোপন করছে।সাপ্তাহিক হাটে দুদিন ফলদ , বনজ ও ঔষধি গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশী জাতের শৌখিন গাছের চারা বিক্রি হয়। ঝালকাঠি বাসন্ডা সেতুর ঢাল ছাড়াও শহরের উদ্বোধন মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের সামনে সবজি চারার হাট , রাজাপুর উপজেলা বাঘড়ি বাজার , নলছিটি উপজেলার ষাটপাকিয়া বাজার ও কাঁঠালিয়া উপজেলার আউড়া বাজার , বটতলা বাজার ও জমাদ্দার হাটসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে চারা বেচা কেনা হয়।
জেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা যায় , বাংলা মাসের আষাঢ় , শ্রাবণ ও ভাদ্র এ তিন মাস গাছের চারা বিক্রি ও রোপনের উপযুক্ত সময়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সাধারণ মানুষ জেলার বিভিন্ন হাট থেকে হরেক প্রজাতির গাছের চারা ক্রয় করে রোপন করছে। সাপ্তাহিক হাটগুলোতে এ বছর প্রায় দুই লাখ চারা বেচাকেনার লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বন বিভাগ এ বছর সদর উপজেলাসহ চারটি উপজেলায় ৮১ হাজার ৩০০ ফলদ , বনজ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করবে। জেলার দুটি আসনের দুই সাংসদের কোঠায় আরও ২০ হাজার গাছ বিতরণ করা হবে। বন বিভাগ এ বছর বিক্রির জন্য ১০ হাজার গাছের চারা উৎপাদন করেছে। এছাড়াও গত বছরের উৎপাদন করা আরও ২০ হাজার গাছের চারা বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। তবে এ বছর অতি বৃষ্টি কারণে চারা রোপনে সমস্যা হচ্ছে।
সরেজমিনে গত সোমবার (২০ জুলাই) সকালে জেলা বন বিভাগের পাশে শহরের বাসন্ডা সেতুর ঢালে সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে দেখা যায় , পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার মাহামুদকাঠি ও বরিশালে বানরিপাড়া উপজেলা থেকে আসা নার্সারি মালিকরা ট্রলার ও নৌকাযোগে বিভিন্ন প্রজাতির চারা সাপ্তাহিক হাটে নিয়ে এসেছেন। সাত সকালেই তাঁরা বাসন্ডা খালে ট্রলার ভিড়িয়ে চারা নামিয়ে হাটে সাজাচ্ছেন। বেলা ১০টা বাজতেই বৃক্ষ প্রেমীদের ভিড় বাড়েত থাকে। হাটে বনজ গাছ হিসেবে মেহগনি ও রেইনট্রি চারা বিক্রি হচ্ছে বেশি। ফলদ চারা গাছেরও কমতি নেই হাটে। আছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছের চারা। মেহগনি ও অন্যান্য বনজ গাছের চারা ২০ টাকা হারে বিক্রি হলেও ফলদ চারা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ শুরু করে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে নারিকেল গাছের চারা ৫০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। ফলদ গাছের মধ্যে মাল্টা ও দেশী কমলা চারার কদর বেশি।
এ হাটে চারা কিনতে আসা সদরের চামটা গ্রামের আ. মজিদ আকন বলেন , প্রতি বছরই চারা গাছ কিনে নিজেদের জমিতে লাগাই। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে বাজারের পঁয়সা বাচিয়ে বিভিন্ন প্রকার ফলের চারা রোপন করছি।
পৌর শহরের কিফাইত নগর এলাকার মোশারফ হোসেন বলেন , ফসলি জমি উচু করে ঘর তুলেছি। উঠান ও ঘরের আশপাশের নতুন মাটিতে বিভিন্ন জাতে ফল ও লেবুর চারা রোপন করার জন্য হাটে চারা কিনতে এসেছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর চারার দাম তুলনামূলক কম।
স্বরূপকাঠি উপজেলার মাহামুদকাঠি গ্রামের নার্সারী ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন , বর্ষার তিন মাস গাছ লাগানোর মৌসূম। এ তিন মাসে আমি কমপক্ষে ৫০ হাজার চারা বিক্রি করতে পারবো। পরিবহন খরচ , হাটের খাজনা খরচ বেশি হওয়ায় আমাদের খরচ পোষাতে কষ্ট হয়। এ বছর করোনার কারণে চারার মূল্য তুলনামূলক কম।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন , এ বছর ঝালকাঠির বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাটে প্রায় দুই লাখ গাছের চারা বেচাকেনা হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও মানুষের বৃক্ষ রোপনে আগ্রহের কমতি নেই। তবে এ বছর অতি বৃষ্টিতে গাছ লাগিয়ে তা বাচাতে একটু সমস্যা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন , পরিবেশ বান্ধব গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন এবং ফল থেকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি পেয়ে থাকি। তাই বেশি করে গাছ লাগাতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন