ঝালকাঠি প্রতিনিধি :ঝালকাঠির রাজাপুরের দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামের হানিফ বিশ্বাস ওরফে দুলাল (৫০) এর ভাগ্যটাই যেন কেমন। বিএ পাস করার পর কোন চাকুরী না পেয়ে ঢাকায় টিউশনি করান তাতেও ভাগ্যের চাকা না ঘোরায় শুরু করেন হকারী। কোন কিছুতেই সুবিধা করতে না পেরে শেষমেষ শুরু করেন রিকসা চালানো। দেশে করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব শুরু হলে তার প্রভাব এসে পরে রাজাপুরে। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারনে বন্ধ হয়ে যায় রিকসার চাকা। পেটের দায়ে সাহায্যের জন্য রোববার হানিফ বিশ্বাস ওরফে দুলাল সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান এবং মেম্বর বাচ্চু মিলে তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। মারধরের কারণ অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে সাতুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামের জয়িতা হেলেনা বেগমকে নিয়মিত যাত্রী হিসেবে বহন করে রিকসা চালক দুলাল। করোনা পরিস্থিতে স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে খাদ্য সংকটে পড়ে দুলাল। রোববার সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে চাল আনতে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন তার জন্য কোন বরাদ্দ নেই। পরে বরাদ্দ আসলে দেয়া হবে। দুলাল জানান , চালের জন্য অনুনয় বিনয় করলে সিদ্দিক চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে বলে তুই জয়ীতা হেলেনাকে রিকসায় টানো কেন, তুই কিছু পাবি না। তখন আমি বলি আমিতো টাকার বিনিময়ে রিকসায় সবাইকে টানি ’ এটা দোষের কি ’ আমরা তো পেটের দায়ে রিকসা চালাই। এসব কথা নিয়ে চেয়ারম্যান ও দুলালের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হলে উপস্থিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু চেয়ারম্যানের মুখে মুখে কথা বলার সাহস কই পাইছো বলেই পিঠে ও বুকে কিল ঘুষি মারতে মারতে মাটিয়ে লুটিয়ে ফেলে। এক পর্যায় মারতে মারতে গায়ের জামা ছিড়ে ফেলে। পরে স্থানীয়রা দুলালকে চেয়ারম্যান ও মেম্বরের রোষানল থেকে রক্ষা করে। ঘটনার পর দুলাল প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে তিনি রাজাপুরের ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত সাতুরিয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সকালে ত্রানের চাল ইউনিয়ন পরিষদে ঢুকানোর সময় ওই রিকসা চালক দুলাল পরিষদের গেটের মধ্যে রিকসা ঢুকালে ত্রানের চাল আনতে সমস্যা দেখা দেয়। তাকে সরে যেতে বললেও সে রিকসা নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে ধাওয়া দিলে সে রিকসা ফেলে চলে যায়। তাকে মারধর করা হয়নি। সাতুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেন জানান, ওই রিকসা চালকের নাম আপাতত ত্রানের তালিকায় নেই, তাই তাকে চাল দেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী বরাদ্দ যদি আসে তখন সে পাবে। রিকসা চালক দুলাল আপন ভাইয়ের ঘরের পাশে বাথরুম নির্মাণ করেছে। এতে তার ভাইয়ের পরিবারের সমস্যা হচ্ছে এবং পরিষদে অভিযোগ দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে আমার সাথে কথাকাটাটি করে , তাকে মারধররের অভিযোগ সত্য নয়। রাজাপুরের ইউএনও মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন , ওই ব্যক্তির ত্রান না পাওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য এবং তাকে ত্রান দেয়ার জন্য পিআইওকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মারধরের ঘটনায় রিকসা চালককে আমি থানায় যেতে বলেছি। রাজাপুর থানার ওসি জাহিদ হোসেন জানান, এ ধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি , পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেক্য রাজাপুরের দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী বিশ্বাসের ছেলে হানিফ বিশ্বাস ওরফে দুলাল রাজাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি, ভান্ডারিয়া কলেজ থেকে ১৯৯১ সালে এইচএসসি এবং ১৯৯৩ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। পরে চাকুরির সন্ধানে ঢাকায় গিয়ে টিউশনী শুরু করেন, পরে এক গামেন্টস কর্মী নারীকে বিয়ে করে ফুটপাতে হকারি করে পোষাক বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু অভাবের কারনে ১ ছেলে রেখেই স্ত্রী তাকে ছেড়ে তিন-চার বছর আগে চলে যায়। পরে রাজাপুর গ্রামের বাড়িতে এসে একটি রিকসা কিনে এলাকায় চালানো শুরু করেন। রিকসা চালানোর আয়ে সংসার মোটামুটি ভালই চলছিল। বছর দুইয়েক আগে আবার বিয়ে করেন সে ঘরেও একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। দুলালের বড় ছেলের বয়স ১০ এবং ছোট ছেলের বয়স এক বছর। বর্তমান করোনা পরিস্থিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারনে ৫ সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন দুলাল।