রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধিঃ-
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল নেকমরদ হাটে অতিরিক্ত হাসিল(ইজারা) আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই উপজেলা প্রশাসনের।
ঐতিহ্যবাহী এ নেকমরদ হাট সপ্তাহের প্রতি রোববার নেকমরদ -রালিয়াডাঙ্গী মহাসড়ক ঘেষে হাটের নিজস্ব জমিতে বসে। হাটে গরু ছাগল সাইকেলসহ বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের হাসিল অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ হাটের ক্রেতা বিক্রেতাদের।
গতকাল রোববার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,হাটের শুরুতেই জেলা প্রশাসনের গবাদিপশুসহ বিভিন্ন পণ্যের হাসিল আদায়ের দর সম্বনিত একটি বিশাল সাইনবোর্ড বাশঁ দিয়ে সাটানো। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে সাইনবোর্ডের হাসিল আদায়ের দরের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। হাটে বিপুল সংখ্যাক গরু ছাগল সহ মানুষজনের ভিড়। কেউ গরু কেউ বা ছাগল কিনছে। কেউ আবার বিক্রি করছে। তবে ভোগান্তিরও শেষ নেই ক্রেতা বিক্রেতাদের। হাটে বিপুল সংখ্যাক গরু ছাগল থাকলেও হাসিল জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত দরে নেওয়া হচ্ছে না। হাটে গরু ছাগলের অনন্ত ছয়জন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন সাইনর্বোডে গরু প্রতি টোল ২৩০ টাকা হলেও ইজারাদার নিচ্ছে ৩৩০ টাকা। ছাগল ৯০ টাকা হলেও ১৪০ টাকা দরে আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে সাইকেলের ইজারা ১১০ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে ২৫০ টাকা। সাইকেলের একজন পাইকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, আমরা যারা পাইকার তারা সাইকেল প্রতি হাসিল দেয় ৬০ টাকা বাধ্যতামুলক। আর যারা ক্রেতা তারা দেয় ২৫০ টাকা। তাহলে সাইকেলের হিসাব দাড়ালো ক্রেতা বিক্রেতা মিলে ৩১০ টাকা। অথচ একজন সাইকেল ক্রেতা শুধুমাত্র ১১০ টাকা হাসিল দেওয়ার কথা। অথচ হাট ইজারাদার এখানে ক্রেতা বিক্রেতা দুজনের কাছেই অনিয়মভাবে জোর পর্ূবক অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছে। এছাড়াও ধানসহ বিভিন্ন খোলাবাজারের দোকানিদের কাছে অনৈতিকভাবে বেশি হাসিল আদায় করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। এর প্রতিকারে কোন ব্যবস্থা নেই উপজেলা প্রশাসনের বলে অভিযোগ ক্রেতা বিক্রেতাদের।
জগদ্দল গ্রামের গরু ক্রেতা মুনসুর অভিযোগ করে বলেন,গত মাসে একটি গরু কিনে ইজারাদারকে জমা (হাসিল) দিয়েছিলাম ২৫০টাকা। আর এখন একটি গরু কিনে দিতে হলো ৩৩০ টাকা। গতবার দিয়েছিলাম ২০ টাকা বেশি এবার দিলাম পুরো ১০০ টাকা বেশি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সব জায়গায় ডাকাতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মনে হয় কেউ নেই। সাধারণ মানুষ আমরা বড় অসহায়।
একইভাবে গরু ছাগল ক্রেতা আনিসুল জব্বার রিপনসহ উপস্থিত অনেকে বলেন,সাংবাদিকরা আসে ভিডিও করে সংবাদপত্রে প্রকাশ করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। ইজারাদারদের প্রকাশ্যে ডাকাতি কেউ রুখতে পারবে না। এখন আবার মেলার নামে সাধারণ মানুষের উপর জবরদস্তি রোলার চালানো হচ্ছে। মেলার নামে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে হাটের ইজারা। যা আমাদের জন্য অসহনীয় বলে তারা মন্তব্য করেন।
জেলা প্রশাসনের হাসিল(ইজারা) আদায়ের তালিকা ঘেটে দেখা যায়, সরকারী ভাবে ইজারা দেওয়া হাটে নিয়োগকৃত ইজারাদার গরু প্রতি ২৩০ টাকা ছাগল প্রতি ৯০ টাকা সাইকেল প্রতি ১১০টাকা আদায় করবে। অথচ প্রশাসনের দেওয়া দর উপেক্ষা করে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত হাসিল।
বাংলা ১৪২৬ সন অথ্যাৎ এক বছরের জন্য হাট ইজারা নেয় নেকমরদ এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তোজাম। তিনি মুঠোফোনে বলেন কাগজে কলমে আমার নামে হাট চললেও। নেকমরদে মাসব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ওরশ মেলার কারণে আমাকে ৫টি হাট অথ্যাৎ পুরো এক মাস হাটের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হয়। মেলার কারণে আমি অসহায়। এ হাট মেলা কমিটি আবার ইজারা দেয় এক মাসের জন্য। সেই ইজারাদার হাট পরিচালনা করে থাকে। আপনারা বাকিটা মেলা কমিটির কাছে জেনে নেন।
নেকমরদ ওরশ মেলা কমিটি কতর্ৃক ইজারাদার মোঃ মমিন বলেন, হাটের ইজারা আমাদের মেলা কমিটি নির্ধারণ করেছে। আমি হাসিল বেশি নিচ্ছি না। মেলা কমিটি যা নির্ধারণ করে দিয়েছে তাই নিচ্ছি। মমিন ১ মাসের জন্য হাট ইজারা নিয়েছেন প্রায় ৩৪ লাখ টাকা বলে তিনি মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন।
এ প্রসঙ্গে নেকমরদ ওরশ মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সফিউল ইসলাম বিপ্লব মুঠোফোনে বলেন, হাটের ইজারা দর নির্ধারণের জন্য মেলা কমিটি কতর্ৃক একটি রেজুলেশন হয়েছে। যেখানে হাটের ইজারা বৃদ্বির কথা উল্লেখ্য রয়েছে। সেখানে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাংসদ জাহিদুর রহমান ইউএনও মৌসুমী আফরিদাসহ অন্যানা উপদেষ্টাদের স্বাক্ষর রয়েছে। তাই প্রশাসনিক কোন বাধা নেই।
বক্তব্য নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদার দপ্তরে ও মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায় নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন