বিজয় রায়, রাণীশংকৈল প্রতিনিধি:
নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে কালের আবর্তে বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প টিকে থাকলেও এসব কাজে জড়িত মৃৎ পরিবারগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের এই আদি পেশা এখনও ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে মৃৎশিল্প অতি প্রাচীন। মৃৎশিল্প এমন একটি মাধ্যম যা মাটিকে নিয়ে আসে মানুষের কাছাকাছি।
মৃৎ কারিগরেরা বংশপরস্পরায় মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। পিতার পরে সন্তান,তারপর তার সন্তান, মৃৎ পারিবারিক ঐতিহ্যপূর্ণ এই ব্যবসায়ের হাল ধরেন। বাপ-দাদার ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরিবারের সন্তানেরা বড় হয়। এভাবে তারা জন্মের পর থেকে বড় হতে হতে জাত শিল্পী হয়ে ওঠেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার পৌরশহরের ভান্ডারা গ্রামের একাংশে প্রায় অর্ধশতাধিক হিন্দু পরিবার মিলে গড়ে তুলেছিলেন যুগিপাড়া । আর সেই যুগিপাড়ার প্রাচীন শিল্প মাটির ঘটি, টেপা পুতুল, ধুপতি, বড় ধুপতি ,মাটির ঘোড়া ,সৈলতা জ্বালানোর প্রদীপ, মাটির ব্যাংক, ছোট ছোট খেলনার মাটির হাড়ি-পাতিলসহ নানারকম পণ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। আগে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান বাংলা নবর্ষষের মেলায় , হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিভিন্ন পূজা-প্লাবনে এই সব মাটির জিনিসগুলো বিক্রি করা হত । কিন্ত এসব জিনিসের চাহিদা এখন আর আগের মতো নেই। তাই এসব পণ্য তৈরির আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন মৃৎ কারিগরেরা ।সেই সময়ে এই পেশার অনেক কদর থাকার কারণে এই যুগিপাড়ায় পাকিস্তান আমল থেকে বর্তমানে যারা আছেন তাদের পূর্বপুরুষরা আগ্রহের সাথে এটিকে গ্রহণ করেছিলেন।
সম্প্রতি পৌরশহরের এই যুগিপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে প্রায় ২০ টি পরিবার জীবন জীবিকার তাগিদে বাপ-শ্বশুরদের রেখে যাওয়া হাতের এই কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহন করেছেন। কথা হয় সমলা দেবী,বন্যা, ননী বালা,ভারতী রাণী, মীনা দেবী এবং সুরুবালা দেবী সহ কয়েকজন নারী শিল্পীর সাথে।
৮৫ বছরের জামনি দেবী জানান, এ পেশার সাথে জড়িত আমাদের পুর্বপুরুষেরা কেউ কেউ চলে গেছেন ওপার বাংলা ভারতে। আবার কেউ কেউ জীবন-যাত্রার মান উন্নয়নের কারণে এ পেশা ছেড়ে অন্যান্য পেশা গ্রহন করেছন।
পঞ্চম(৬০) নামের এক জনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাপ-দাদাদের রেখে যাওয়া এই ক্ষুদ্র পেশাটাকে গ্রহণ করি কারণ সে সময়ে এই পেশার অনেক কদর ছিল । ক্ষুদ্র এই মৃৎশিল্পের জিনিসগুলো আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। নানা রকমের পূজা, এমনকি বিয়ে বাড়িতে সৈলতা প্রদীপ জ্বালানোর জন্য আমাদের এই মাটির প্রদীপ ব্যবহার করা হয় । কিন্তু এখন দেখছি আমাদের এই মাটির জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই এই বাপ-দাদার এই পেশাটাকে আমরা কিংবা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা কি ধরে রাখতে পারবে ? বর্তমানে এই মৃৎশিল্পের জিনিসগুলোর ব্যবহার ও দামে কম এবং মাটির দাম বেশি হওয়ায় মনে হয়না আমরা এই পেশাটাকে ধরে রাখতে পারব।
নারী ক্রীড়া সংগঠক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলার মাধ্যমে এই শিল্পের প্রর্দশনীর আয়োজন করে ক্ষুদ্র শিল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা দরকার। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।