fb_img_1486992757085

বিশেষ প্রতিনিধি চট্রগ্রাম থেকে
পয়লা ফাল্গুন চট্টগ্রামে সবার মুখে মুখে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত । সকাল থেকে নগরীর ডিসি হিলে রয়েছে বর্নাঢ্য আয়োজন। নতুন সাজে সেজেছে সকল বয়সী নর নারী থেকে কচি কচি কোমলমতি ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। শীতের শেষে ঋতুচক্রের এই মাস বাঙালির জীবনে প্রকৃতির রুপ বদলে যায়। শুরু হয় অন্যরকম জীবনধারা।
ফুল ফুটবার এই দিন। ঝরে পরা শুকনা পাতার মর্মর ধ্বনির দিন। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও দোলা লাগায়। একই সাথে বাসন্তি রঙয়ের শাড়ি ও পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে আনন্দে মেতে ওঠার আহবান।
এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর।
শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বনবনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব।
এ ছাড়াও পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরোহী অন্তর । যদিও এই ব্যাস্ত নগরীতে এ চিত্র দেখা বা শোনা দুষ্কর। তবুও কবির ভাষায়, ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত।’
বাংলা সাহিত্যে বসন্ত বন্দনা যেভাবে হয়েছে তেমনি রাজনীতিতেও এ বসন্তের গুরুত্ব কম নয় । এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। যা পরবর্তিতে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছিল।
বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। মিলনের এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। অন্যদিকে, শহরের নাগরিক জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ও একুশের বইমেলা।
আবৃত্তিকার জাবেদ হোসেন ও শারমিন মৃত্তিকার চমৎকার উপস্থাপনায় সকাল নয়টায় শুরু হয় ১২তম বসন্ত উৎসব। রাগ ভৈরবীর পর একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিমুল নন্দী। তারপর অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গনের দলীয় পরিবেশনা। এভাবে চলবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
এরপর বিকেল তিনটায় বের করা হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। চারটায় আলোচনা পর্ব। এতে অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক মনোজ সেনগুপ্ত, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহেদ মালেক ও জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।
বোধনের কর্মী শুভাশীষ পাল বলেন, ‘নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এল প্রাণে’ স্লোগানে ১২ বছর ধরে বোধন আবৃত্তি পরিষদ বসন্ত উৎসব করে আসছে। বোধন চট্টগ্রামে বসন্ত নিয়ে প্রথম আয়োজন করেছিল এবং বোধনই দেশে প্রথম আবৃত্তি স্কুল পরিচালনা শুরু করে।
তিনি জানান, প্রকৃতির রঙে, বসন্তের রঙে নিজেকে রাঙাতে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তিনি বসন্ত উৎসবে ছুটে এসেছেন। মাটির টানে, প্রাণের টানে সংস্কৃতিবান মানুষের প্রাণের মেলায় আসতে পেরে নিজেকে বাঙালি মনে হচ্ছে।
অপরদিকে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯ টায় দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক উৎসবের উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সামশুল আরেফিন।
অশুভ আর অসুন্দরের বিনাশ ঘটিয়ে নতুন পাতা আর নতুন ফুলের মতো নতুন দিন আর সুন্দরের আবাহনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলায় শুরু হয়েছে বসন্ত উৎসব। প্রমা আবৃত্তি সংগঠন এই উৎসবের আয়োজন করেছে।

বৃন্দ আবৃত্তি, দলীয় আবৃত্তি, নৃত্যসহ বিভিন্ন আয়োজনে চলছে বাঙালির এই প্রাণের উৎসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন