বৃহত্তর নোয়াখালীর রায়পুরের কৃতি সন্তান কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে নিজকে বাংলাদেশের যোগ্য সন্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। তার সাথে রয়েছে সেখানকার রাজপরিবারের গভীর সুসম্পর্ক। কুয়েতের ব্যবসায়ীক মহলে যার একছত্র আধিপত্য এবং যার প্রতিষ্ঠান কুয়েতের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। লক্ষীপুর জেলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট শিল্পপতি মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপ অফ কোম্পানীর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও (সিইও) বাংলাদেশের এনআরবি ব্যাংক-এর পরিচালক, কুয়েতের বঙ্গবন্ধু স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির সভাপতি, বিজনেস কমিটির অন্যতম নেতা, বিশিষ্ট দানবীর, গরীব দুঃখী মানুষের প্রাণপ্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহভাজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুল রাজতন্ত্রের দেশ কুয়েতের যেন আরেক ‘প্রিন্স’। সাতটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। প্রতিষ্ঠানগুলোর গাড়ির সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশী। তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করেন ৫ শতাধিক কুয়েতি ও আমেরিকানসহ প্রায় ২০ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তাদের মধ্যে ১৬ হাজার বাংলাদেশি। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৩১টি দেশের বহু নাগরিকের কাজের ঠিকানা তার হাতে গড়া কুয়েতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের এই নাগরিককে প্রতিষ্ঠিত ও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে অনুসরণীয় উল্লেখ করে স্থানীয় কুয়েত টাইমসসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রায়শই ছাপা হয় তাকে নিয়ে প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার। কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে পঞ্চম। কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল-এর কুয়েত জুড়ে ইলেকট্রিক্যাল কস্ট্রাকশন, ইন্টারন্যাশনাল মানি রেমিটেন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং মেইনটেনেন্স (অয়েল অ্যান্ড গ্যাস), ইউএস আর্মি ও জাতিসংঘের সঙ্গে মিলিটারি সাপোর্ট কন্ট্রাক্ট, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, ট্রান্সপোর্টেশন লজিস্টিক, আর্মড, নন আর্মড আইটি সিকিউরিটি, ফিশিং, এক্সপোর্ট ইম্পপোর্ট, ইন্টারনাশনাল ব্র্যান্ড ও মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির স্পন্সর, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সিসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে আলোচিত এ বাণিজ্যিক গ্রুপটি। চলাফেরায় সাদাসিধে, তবে চড়েন রোলস রয়েলসের লেটেস্ট ‘বেন্টলি’ মডেলের গাড়িতে। প্রবাসী হয়েছেন মাত্র দুই যুগ। এর মাঝেই নিজের মেধা আর শ্রমের সমন্বয়ে মরুভূমির দেশ কুয়েতে গড়ে তুলেছেন এক বিশাল সাম্রাজ্য। কি করে সম্ভব হলো এই অসম্ভবকে সম্ভব করা? মেঝো ভাই ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কাজী মঞ্জুরুল আলমের হাত ধরে পাড়ি দেয় মরুভূমির দেশ কুয়েতে। ‘তখন থেকে স্বপ্ন দেখেন, অনেকের মধ্যে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নেওয়ার জন্য। দোভাষি হিসেবে যোগ দেয় আমেরিকান অয়েল কোম্পানি ভ্যাকটেলে। পরের বছর কুয়েত ছেড়ে ওপাড়ি দেই আমেরিকায়। সেঝো ভাই মেডিকেল ল্যাব রিচার্সার কাজী ফকরুল আলমের, এর পর উচ্চশিক্ষার জন্যে ভর্তি হন নিউইয়র্ক ও সিটি কলেজে, বিষয় অর্থনীতি। সেখান থেকে কুয়েত ফিরে যোগ দেই একটি ট্রেডিং অ্যান্ড কন্টাক্ট্রিং প্রতিষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালকের পদে। বেশিদিন ভালো লাগেনি। কাজে বৈচিত্র আনতে যোগ দেই গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টয়োটাতে সেলস অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে’। ‘১৯৯৪ সালে কুয়েতে ব্রিটিশ নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থা গ্রুপ ফোর গড়ে ওঠে ওনার হাতে। ১৯৯৭ সালে যোগ দেন মারাফি কুয়েতি কোম্পানিতে সিকিউরিটি ডিভিশনে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে’। ‘নিজের মেধা আর অক্লান্ত পরিশ্রমে মারাফি কুয়েতিকে গ্রুপে পরিণত করে গঠন করেন একে একে সাতটি কোম্পানি। ১৯৯৯ সালে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হিসেবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে আমেরিকান আর্মিসহ একাধিক প্রাইম ইউএস গভর্নমেন্ট কন্ট্রাক্টে ৮২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রকল্পের কাজ পায়। কুয়েত সরকারের দেড়শ’ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি কাজ পায়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৭ সালে সফল ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় গ্রুপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই। এক পর্যায়ে দেখা গেলো এ গ্রুপটি উঠে এসেছে অন্যতম শীর্ষস্থানে। কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল কাজে কোনো বিরাম নেই। প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। আবার মাস পার হওয়ার আগেই বেতন দেওয়া হয় কর্মীদের। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে দেশ থেকে ১০ হাজার কর্মীকে এনে চাকরি দিয়েছেন এই গ্রুপে, যার ওপর ভিত্তি করে দেশে এক লাখ মানুষ ভালো আছেন। পরিকল্পনা রয়েছে দেশ থেকে আরো ৩ হাজার দক্ষ, অদক্ষ, সাধারণ কর্মী আমদানি করবেন কুয়েতে। সরকারি সহযোগিতা পেলে কুয়েতসহ তেল সমৃদ্ধ ছয়টি দেশ থেকে বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও দেশে আন্তর্জাতিক মানের মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে, কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। ব্যক্তি জীবনে চার মেয়ে এক ছেলের জনক। দুই মেয়ে পড়ছেন আমেরিকায়। সন্তানরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবেন আর তিনি দেশে ফিরে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন- এটাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য এবং এক সভায় ওনার বক্তব্যে বলেছেন রোজগারের ২৫ শতাংশ মানবকল্যাণে ব্যয় করবেন। সে লক্ষ্যে ওনার জন্মস্থান রায়পুরে লক্ষীপুরের মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল কলেজ, এতিমখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং গরিব অসহায় মানুষকে কোটি কোটি অর্থ অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন এবং কিছুদিন পূর্ব তাঁর সহধর্মিনী দেশের উত্তরাঞ্চল রংপুর ও দিনাজপুরে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ৫০ লক্ষ টাকার অনুদান প্রদান করেন আরো কয়েক কোটি টাকা দিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।