নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
ব্যবসা নয় মানবতাই চিকিৎসার ধরম এটা বার বার প্রমান রাখছেন ডা সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান ডাঃ রুবাইয়াত ইসলাম মন্টি। যেখানে মানবতা বিপন্ন কিংবা মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না সেখানেই ডাঃ রুবাইয়াত ইসলাম মন্টি। গতকাল তার নির্দেশে টাঙ্গাইলের সখীপুরের কচুয়া গ্রামের অসুস্থ বীর প্রতীক হামিদুল হককে (৭৫) কে তার মালিকানাধীন রাজধানীর মালিবাগে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেডে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টায় জাতির এই সূর্য সন্তানকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের ১৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এর আগে দুপুর দেড়টার সময় বীর প্রতীক হামিদুল হকের ছেলে ওবাইদুল হক ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) প্রিন্সিপাল ডা. এমএ আজিজের কথা মত তাকে ( বীর প্রতীক হামিদুল হক) নিয়ে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেডের জরুরি বিভাগে আসেন । জরুরি বিভাগের ডা. তাসাদ্দুক আহমেদ প্রাথমিকভাবে বীর প্রতীক হামিদুল হকের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাবরীনা ইয়াসমীনের অধীনে ভর্তির সুপারিশ করেন। অসুস্থ বীর প্রতীক হামিদুল হককে নিয়ে রোববার (২৫ মার্চ,২০১৮) দুপুর বারটায় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেডের চিফ ইক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজের নজরে আসলে তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন।
অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ মঙ্গলবার সকালে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেডের উপ পরিচালক ডা. আব্দুল মালেক মৃধাকে বীর প্রতীক হামিদুল হকের চিকিৎসার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা পেয়ে ডা. আব্দুল মালেক হামিদুল হকের চিকিৎসার সব প্রস্তুত রাখেন। প্রসঙ্গত, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া রণাঙ্গনের বীরযোদ্ধা টাঙ্গাইলের সখীপুরের কচুয়া গ্রামের বীর প্রতীক হামিদুল হক (৭৪) জীবন যুদ্ধে পরাজিত হতে বসেছিল। দীর্ঘদিন ধরে উন্নতমানের চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে দিন কাটছিল এ বীরযোদ্ধার। তার দিন কাটছে বাসায় শুয়ে বসে। ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেড কর্তৃপক্ষ তারা বীর প্রতীককে চিকিৎসা দিতে পারলে সুস্থ হবেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের ৫ মার্চ ভোর বেলায় ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন বীর প্রতীক হামিদুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুস সামাদের হলে উঠলেন তিনি। আবদুস সামাদ তার বাল্যবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য ৭ মার্চ ভোরবেলা চলে গেলেন রেসকোর্স ময়দানে। খুব কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হলেন। হামিদুল হক ১৯৭১ সালে স্থানীয় কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তি যুদ্ধে। দেশের অভ্যন্তরে টাঙ্গাইলে গঠিত কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে কালিহাতীর বল্লাসহ আরো কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন। পাশাপাশি কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক বিভাগেরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব পালন করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য হামিদুল হককে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৪২২। তিনি ১৯৭২ ও ৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার একাধিকবার সাক্ষাতও করেছেন। ১৯৯০ সালে সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। বর্তমানে সখীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম হাবিল উদ্দিন, মা কছিরন নেসা, স্ত্রী রোমেচা বেগম। তাঁদের চার মেয়ে, এক ছেলে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বীর প্রতীক হামিদুল হক, বীর প্রতীক হামিদুল হক ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল লিমিটেডে ভর্তির পর সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাবরীনা ইয়াসমীন ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ কিছু মেডিকেল শিক্ষার্থী নিয়ে যখন হামিদুল হকের শারীরিক পরীক্ষা করেন, তখন জাতির এই সূর্য সন্তান বীর প্রতীক হামিদুল হক আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় উপস্থিত চিকিৎসকসহ সকলে যেন ধমকে যান। এসময় বীর প্রতীক হামিদুল হক বলেন, এত ভালাবাসা আমি কোথায় রাখব? উপস্থিত সকলে তাকে সান্ত্বনা দেন।