হুমাযুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম :
প্রত্যাশা পুরণ হল কুড়িগ্রামবাসীর। হাজারো মানুষের উপস্থিতি, উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু করলো ঢাকা-কুড়িগ্রাম আন্ত:নগর ট্রেন সার্ভিস ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’-এর। বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি ট্রেনযাত্রার শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় হাজারো মানুষের করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফরম। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও দলীয় ব্যানার আর ফেস্টুনে রুপসী সাজে সেজেছে গোটা স্টেশন চত্বর। ছোট ছোট শিশুরা থেকে বৃদ্ধরাও এসেছেন বহুল কাংখিত এই আন্তনগর ট্রেনের শুভ উদ্বোধনের সাক্ষি হতে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর পর এই ট্রেনটি পেল পিছিয়ে পরা এ জনগোষ্ঠীর মানুষ। তাই আনন্দ উদ্বেলে আত্মহারা তারা। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর চিৎকার আর করতালিতে ফেটে পরে পুরো এলাকা।
ট্রেন উদ্বোধন উপলক্ষে কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম চত্বরে সমবেত হয়েছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনসহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপি, কুড়িগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য আছলাম হোসেন সওদাগর, কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহম্মেদ, রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার হারুন অর রশীদ, ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাফর আলী। এছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পরে আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পর বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনের বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হবে। নতুন এ আন্তঃনগর ট্রেন উদ্বোধনের খবরে জেলাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বুধবার ভোর থেকে হাজার হাজার নারী, পুরুষ এবং শিশু একনজর দেখতে আসে দীর্ঘ দিনের কাঙ্খিত স্বপ্নের এই ট্রেনটি। নিরাপত্তাকর্মীদের বাধাঁ উপেক্ষা করে তারা ছুঁয়ে দেখে ট্রেনটি। চলে ফটোসেশন, সেলফি। ফেসবুকে ভাইরাল এখন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ ট্রেন। এ জেনো আনন্দের বন্যা কুড়িগ্রামবাসীর।
সুদূর চিলমারী থেকে আসা তরুণ হাফিজ ও সেতু জানান, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। এই ট্রেনটি পাওয়ায় সাধারণ মানুষসহ শিক্ষার্থীরা সহজে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার অধিবাসী রোস্তম আলী তোতা, হামিদ ও রমজান আলী জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিন তিনবার তিনি কুড়িগ্রামে সফরে আসেন। তার অনেকগুলি প্রতিশ্রতির মধ্যে ছিল ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতকরণ। তারই প্রেক্ষিতে তিনি ২০১৮ সালে প্রথমে একটি সাটল ট্রেন চালু করেন। এরপর আন্তনগর ট্রেন চালু করার মাধ্যমে কুড়িগ্রামবাসী দীর্ঘদিনের একটি দাবী পুরণ হল।
১৪টি বগি নিয়ে যাতায়াতের সময় ট্রেনটি রংপুর-বদরগঞ্জ-পার্বতীপুর-জয়পুরহাট-সান্তাহার-নাটোর-মাধনগর-টাঙ্গাইল-মৌচাক-বিমানবন্দরে যাত্রী ওঠা-নামা করবে। অর্থাথ কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা রুটে পথে ১০টি স্থানে ট্রেনটি দাড়াবে। এসময় যাত্রীরা ওঠা-নামা করতে পারবে। ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা-কুড়িগ্রামের ২৮৬ দশমিক ৮ মাইল বা ৪৬১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা যাত্রায় মোট ৬৫৭টি আসন সুবিধা এবং ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম যাত্রায় ৬৩৮টি আসন সুবিধা থাকবে। কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনে ১৬০টি আসন সংরক্ষিত থাকবে। আসন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে শোভন চেয়ার ৫১০ টাকা, এসি চেয়ার ৯৭২ টাকা, এসি সিট ১ হাজার ১৬৮ টাকা এবং এসি বাথ ১ হাজার ৮০৪ টাকা ।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে রেল মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও একজন উপকারভোগীর সাথে কথা শোনেন। এসময় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের বিভিন্ন দাবীর পরিপেক্ষিতে কুড়িগ্রামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতিদেন। একই সঙ্গে ভাওয়াইয়া এ অঞ্চলের মানুষের আবেগের কথা বিবেচনা করে একটি ভাওয়াইয়া ইনিস্টিটিউট করা সম্ভব না হলেও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে ভাওয়াই চর্চা, গবেষনা ওপ্রচার- প্রসারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। শেষে গণভবন প্রান্ত থেকে ’কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ এবং রেল সেক্টরের উন্নয়ন নিয়ে তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জাফর আলী (সাবেক এমপি) বলেন, বিএনপি সরকার আমলে কুড়িগ্রামের একটি রেল স্টেশন ও রেল লাইন তুলে নিয়ে যায়। আর শেখ হাসিনার সরকার নতুন নতুন ট্রেন দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামকে ভালবাসে। তাই বলতে হয়না, চাইতে হয়না-তার আগেই উন্নয়ন করেন। তারই উপহার ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস”।