swan-firm-news

ভুরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ২৪.৪.২০১৭
ভুরুঙ্গামারীতে পুকুরে মাছ ও হাসের খামার করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে কৃষক লুৎফর রহমান। অন্যের বর্গা জমি চাষ করে কৃষিকাজের পাশাপাশি তার নিজ পুকুরে মাছ ও হাসের খামার করে প্রতিদিন সে ১ হাজার ৫ শ টাকা আয় করছে। ডিম বিক্রি করে সংসারের খরচ চালিয়ে তিন পুত্রকে উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে এই অদম্য কৃষক লুৎফর রহমান। ডিম বিক্রি করে নিজে যেমন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে তেমনি এলাকার মানুষের পুষ্টি,আমিষের চাহিদা পুরনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করছে সে। লুৎফর রহমান উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকেরছড়া গ্রামের কিরাম উদ্দিনের পুত্র।
লুৎফর রহমান জানান,সংসারের দারিদ্রতার কারনে বেশীদুর লেখাপড়া করতে না পারায় কৃষি কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। পিতার সংসার থেকে আলাদা হলে পিতার মাত্র ১ বিঘা জমিতে বাড়ি করে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। এদিকে তার সংসারে তিন ছেলের জন্ম হলে তাদের মানুষের মত মানুষ করার স্বপ্ন বুনতে থাকে। এদিকে কোন রকমে মোটা কাপড় মোটা ভাত খেতেও তাকে হিমশীম অবস্থায় পড়তে হয়। এদিকে দু সন্তান এস,এস,সি পাশের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে থাকায় সংসারের খরচ আরো বেড়ে যায়। প্রায় ৪ বছর পুর্বে সে গাইবান্ধা থেকে ২শ খাকী ক্যাম্বেল ও জিংডং জাতের হাসের বাচ্চা এনে বাড়ির পাশে তার ক্রয়কৃত ২৫ শতাংশ জমির পুকুরে কোন প্রকার সরকারী সাহায্য সহযোগীতা ও ঋণ ছাড়াই বকুলতলা সোনালী মাছ ও হাসের খামার নামে একটি খামার গড়ে তোলে। হাসের বাচ্চা গুলো বড় হয়ে ডিম দেয়া শুরু করলে লুৎফর রহমানের যেন ভাগ্যের চাকাও ঘুরতে থাকে। বর্তমানে হাসের খামার থেকে প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে ১ হাজার ৫ শ টাকা আয় এবং হাসের খাবার বাবদ প্রতিদিন ৫শ টাকা খরচ বাদ দিয়েও প্রতিদিন ১ হাজার টাকা রোজগার করছে। এছাড়া খামারের পুকুরের উপরে তার রয়েছে একটি মুদি দোকান। সারাদিন হাস ও মাছ পাহারা দেয়ার পাশাপাশি দোকান থেকেও আয় হচ্ছে। হাসগুলো পুকুরের বিভিন্ন খাবার খেলেও প্রতিদিন বাড়তি বাজার থেকে খাবার খাওয়াতে হয়। বিকালে বাড়ির সাথেই সুনীলের কুড়া নামক বিলে নিয়ে খাবার খাওয়াতে হয়। এর পর হাসগুলোকে খামারে আনতে হয়। লুৎফর জানান,হাস পালনে হাসের বাচ্চা ক্রয়,হাসের ঘর তৈরি ,খাবার এবং ঔষধসহ তার এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ টাকা। আর হাসগুলো থেকে ৩ বছরে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার ডিম বিক্রি করা হয়েছে এবং হাসের খাদ্য বাবদ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেও বছরে ১ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। তিনি আরও জানান, উপজেলা সদরে ডিমের প্রচুর চাহিদা থাকায় প্রতিদিন ১৫০ ডিম ৮ টাকা দরে ডিমের পাইকাররা বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়। লুৎফর রহমান জানান হাসের খামার করে আমার পরিবারের দুঃখ দুর্দশা কমে স্বচ্ছলভাবে সংসার চালাচ্ছি। আমার তিন পুত্র একজন কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিদ্যায় অনার্স পাশ করে চাকুরী না পাওয়ায় আমার খামারে শ্রম দিচ্ছে। মধ্যম পুত্র ঢাকার তিতুমীর সরকারী কলেজে অনার্স এবং ছোট ছেলে ভুরুঙ্গামারী কিশলয় বিদ্যা নিকেতনে ৮ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। আমার খামারে এ যাবৎ কোন সরকারী সাহায্য সহযোগীতা ও কোন প্রকার ঋণ পাইনাই। সরকারীভাবে সহায়তা ও ঋণ পেলে হাসের খামারটি আরও সম্প্রসারিত করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারবো বলে আশা রাখি। এছাড়া আমার মত যদি সকলেই বাড়িতে খামার গড়ে তোলে তবে শীঘ্রই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ মাথা উচু করে দাড়াতে পারবে। এ বিষয়ে পাইকেরছড়া ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন আমার ইউনিয়নে সফল খামারী হিসাবে লুৎফর রহমান একটি মডেল। তার খামার দেখে আমি এলাকার যুব সমাজকে খামার গড়ে তোলার আহবান জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন