ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে এক কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। গণধর্ষনের শিকার ওই কিশোরী ও কিশোরীর মা ধর্ষকদের হুমকিতে প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে এলাকার প্রভাবশালী মহল। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের পাগলারহাট নামক স্থানে।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটি মোবাইল ফোনে জানায়, তার চাচাকে মারপিট করে তাকে মোটর সাইকেলে তুলে পাশের একটি বাশঝাড়ে নিয়ে গিয়ে জোড়পূর্বক প্রথমে আবুসামা মেম্বার পরে গামা সহ ৪/৫জন তাকে ধর্ষন করে। রাতভর পাশবিক নির্যাতনে জ্ঞান হারায় সে। জ্ঞান ফিরলে বাড়ির নিকট রাস্তার উপর পড়ে থাকা অবস্থায় নিজেকে আবিস্কার করে, ততক্ষনে ভোর হয়ে গেছে।
জানা যায়, শিলখুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ ধলডাঙ্গা গ্রামের এক ভিক্ষুকের মেয়ে (১৩) ঢাকায় বিভিন্ন বাসায় ঝিএর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদিকে কিছুদিন আগে মেয়েটি নওগার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে তার দুর সম্পর্কের চাচা শরপত আলীর সাথে ১৭ জুন নিজ বাড়িতে রওয়ানা হয়। ওই দিন ভূরুঙ্গামারীতে পৌছতে রাত হয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে ভূরুঙ্গামারী থেকে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শাহা আলমের অটোরিক্সায় চড়ে বসেন। অটোটি রাত ১১ টার দিকে পাগলারহাট বাজারে পৌছলে চালক শাহা আলম অটো থামিয়ে দেয়। সেখানে ওই অটোচালক শাহালম মোবাইল ফোনে তিলাই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু সামাকে ডেকে আনে। ইউপি সদস্য আবু সামা (৪৬) তার সহযোগি দক্ষিণ ছাটগোপালপুর গ্রামের নওসাদ কসাইয়ের ছেলে সরবেশ আলী (৩৪), আশরাফুল আলম গামা (৩৫) ও উত্তর ছাটগোপালপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে জুবায়ের হোসেন (৩২) মিলে মেয়েটিকে অটোরিক্সা থেকে নামিয়ে মোটর সাইকেলে তোলে। এসময় মেয়েটির চাচা বাধা দিলে ইউপি সদস্য আবু সামার সহযোগি জুবায়ের হোসেন চড়থাপ্পড়সহ মারপিট করে মাটিতে ফেলে দেয়। এদিকে আবুসামাসহ অন্যান্যরা মেয়েটিকে নিয়ে চলে যায়। মেয়েটিকে নিয়ে পাগলারহাটের অদুরে রমজান আলীর বাড়ির নিকটে একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ভোর ৪টা দিকে বাড়ির কাছে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। মেয়েটির জ্ঞান ফেরার পর বাড়িতে গিয়ে তার বাবামাকে জানায়। পরদিন সকালে মেয়েটির বাবা-মা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান এবং শিলখুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন ইউসুফকে ঘটনাটি জানায়। চেয়াম্যান ঘটনাটি নিয়ে তিলাই ইউপির সাবেক সদস্য করিমের বাড়িতে বসলে ধর্ষণের মুল হোতা ইউপি সদস্য আবু সামা ও তার সঙ্গীরা চেয়াম্যানের উপর চড়াও হয়। এসময় ধর্ষণের শিকার মেয়ে এবং তার পরিবারের লোকজনকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। পরেরদিন থেকে ধর্ষিতা ও তার মা বাড়ি থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জনের সৃষ্টি হলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি মহল গোপনে মিমাংসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ধর্ষকরা প্রভাবশালী হওয়ায় অসহায় পরিবারের আইনগত সহায়তা প্রদানে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পাচ্ছে না। ওই রাতে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির চাচা শরপত আলী জানান, উক্ত আবু সামার নেতৃত্বে আমাকে মারপীট করে আমার নিকট থেকে আমার বাতিজিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং কয়েকজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। আমি ধর্ষনকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই। শিলখুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন ইউসুফ ঘটনার সত্যতা শিকার করে জানান,গণধর্ষণের ঘটনাটি লজ্জাকর। আমরা এর বিচার দাবী করছি।
ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ কবির জানান, এ ব্যাপারে থানায় কেউ মামলা করতে আসেনি, তবে মামলা হলে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএইচএম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী জানান,বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং গণধর্ষণের ঘটনা প্রমানিত হলে ধর্ষিতাসহ পরিবারের সকলকে আইনী সহায়তা সহ নিরাপত্তা প্রদান করে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।