স্টাফ রিপোর্টারঃ
ভূরুঙ্গামারীতে বাল্য বিয়ের শিকার এক গৃহবধু অর্থভাবে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা। বাল্য বিয়ের শিকার এ গৃহবধূর নাম মোছাঃ হাজেরা খাতুন (১৬), স্বামী মোঃ লালচান মিয়া (বাদশা) ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের নলেয়া গ্রামের উত্তর চর নলেয়া পাড়ার বাসিন্দা। উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের হাজেরা খাতুন বেসরকারী সংস্থা সিসিডিবি কর্তৃক পরিচালিত স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করেছে এমন সময়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয় বাদশা মিয়ার সাথে। বিয়ের সময় হাজেরা খাতুন ১২ বছরের কিশোরী আর বাদশা মিয়ার বয়স ছিল ১৪ বছর। চার ভাই-বোনের মধ্যে হাজেরা বেগম ছিল তৃতীয়। হাজেরার বাবা একজন পাগল এবং মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে বহু কষ্টে সংসারের খরচ বহন করত। স্বাভাবিক ভাবেই হাজেরা পরিবারের মধ্যে একজন বোঝা হয়েই বড় হচ্ছিল। পড়ালেখার খরচ দিতে ব্যর্থ হয়ে এবং সমাজে মেয়ের লাঞ্চনার কথা বিবেচনা করে হাজেরা খাতুনের মা হাজেরাকে বাল্যবিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাদশা মিয়া পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। বাবা মারা যাওয়ার কারণে তারও আর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে মায়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাল্যবিয়ে করতে রাজি হয় বাদশা মিয়া। এদিকে যৌতুক হিসাবে পাওয়া ১০ হাজার টাকা দিয়ে বাদশা মিয়া একটি থাকার ঘর তৈরী করেছে। সেখানেই চলছিল তাদের নতুন সংসার। সংসারের খরচ বহন করতে বাদশা মিয়া দিন মজুরের কাজ শুরু করে। কেননা বাদশা মিয়া কোন জমি জমা পায়নি। বসতভিটাই তার একমাত্র সম্বল। বিয়ের কিছুদিন পরেই গর্ভধারণ করে হাজেরা কিন্তু সে বুঝতে পারে না যে সে মা হতে যাচ্ছে। এরি মধ্যে হাজেরা খাতুন জ¦রে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নেয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে,এতে তার প্রথম সন্তানের ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যায়। কিছুদিন পর আবারো গর্ভধারণ করে হাজেরা এবং একজন কন্যা সন্তান জন্ম দেন তিনি। তাদের কন্যার বয়স এখন ৩ বছর ৬ মাস। কন্যা শিশুটিও অপুষ্টির শিকার। সংসার জীবনে কিছুদিন ভাল কাটলেও বর্তমানে মারাত্বক সমস্যায় পড়েছে হাজেরা দম্পত্তি। বিগত ৬-৭ মাস থেকে পেটের পীড়ায় ভূগছে হাজেরা খাতুন। হোমিও চিকিৎসা নিয়েছিলেন কিছুদিন কিন্তু অসুখ কমেনি। গত ১৮ মে ২০১৮ ইং তারিখে গাইনী কনসালটেন্ট ও স্ত্রীরোগ প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ও সার্জনের কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর তার পেটের পীড়া ও জরায়ুর জটিল সমস্যা ধরা পড়ে। ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক ঔষধ খেয়ে পীড়া কিছুটা কমেছিল হাজেরা খাতুনের। কিন্তু টাকার অভাবে বর্তমানে ঔষধ খেতে পারছে না। ডাক্তার ৭ দিন পর আবারো দেখাতে বললেও টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারেনি। দিন দিন বাড়ছে হাজেরা বেগমের কষ্ট। বাড়িতে শুধুমাত্র ২টি হাঁস ও ২টি মুরগী ছাড়া সম্পদ বলতে কিছুই নেই যা বিক্রি করে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে। বাল্য বিয়ের শিকার এরকম হাজারো হাজেরা আজ নানা রোগ ও সংকটে ভুগছে। কুড়িগ্রাম জেলায় বাল্য বিয়ে বিরোধী কাজ করছে আরডিআরএস বাংলাদেশ। ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, আগের তুলনায় বর্তমান এ জেলায় বাল্য বিয়ের হার অনেক কমেছে। তারা স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় বাল্য বিয়ে বন্ধসহ বিভিন্ন সমাজ সচেতনতা মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।