উলিপুর প্রতিনিধিঃ
সারা দেশের ন্যায় কুড়িগ্রামেও চলছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রদান কার্যক্রম। তবে টিকা নিতে আগ্রহী মানুষদের তুলনায় টিকা প্রদান কেন্দ্র সীমিত হওয়ায় ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন টিকা নিতে আসা মানুষজন। উপজেলা প্রতি একটি করে কেন্দ্র হওয়ায় রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি।
রোববার (২২ আগস্ট) সকালে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০ টায় টিকা প্রদান শুরুর কথা থাকলেও দূর দুরান্ত থেকে আসা মানুষজন সকাল ৮ টা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দেরি করে লাইনে দাঁড়িয়ে গেলে টিকা না পাবার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে তারা এমনটা করছেন বলে জানান তারা। এদের মধ্য ভোরে ঘুম থেকে উঠেই টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যাই বেশি।
উলিপুর উপজেলার বামনাছড়া এলাকা থেকে মাকে নিয়ে টিকা নিতে এসেছেন দিনমজুর মর্জিনা বেগম(৩৫)। তিনি বলেন, মা’কে নিয়ে গতকাল (২১ আগস্ট) সকাল ৬ টায় এসেছি। পরে ভিড়ের মধ্যে টিকা নিতে না পেরে দুপুর ২ টায় ঘুরে গেছি। আবার আজকে সকাল ৬ টার দিকে এসেছি। কাল হোটেলে খাবার খেয়েছি। আজ ও কাল আমার ২০০ টাকা করে ক্ষতি হলো। আজকেও টিকা পাবেন কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
একই এলাকা থেকে পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে টিকা নিতে এসেছেন খায়রুল ইসলাম (৩২)। তিনি বলেন, ৮ টা থেকে কাগজ জমা দেয়ার জন্য গেটে দাঁড়ায় ছিলাম। আমার পরিবারের ৬ জনের কাগজ আমার কাছে। কাগজ সেখানে জমা নিবে বলে সেখানে আমাকে অপেক্ষায় রেখেছিলো। এখন ১০ টার দিকে বলতেছে সবাইকে লাইনে দাঁড়াতে। তার মতো অনেকেই এই ধরনের ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
গত ১১ আগস্ট রেজিস্ট্রেশন করার পর টিকা নিতে এসে মোট ৩ দিন টিকা না পেয়ে ঘুরে যেতে হয় গুনাইগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দা মমেনা বেগমকে(৩০)। ৪ বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে আজ তিনি ৪র্থ দিনের মতো এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানান, ১দিন কাগজ জমা দিতে পারলেও পরে কাগজ ফেরত দেওয়া হয় তাকে। আজকেও তিনি লাইনে থেকেও আদৌ টিকা নিতে পারবেন কিনা জানেন না তিনি।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের এক চর থেকে সকালে এসে রোদে লাইনে দাঁড়িয়েছেন কাছিরন বেগম। গত ৩দিন থেকে এসে ঘুরে গেছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গত ৩ দিনে আমার বাড়ির কোন কাজ হয়নি। টিকা গুলো আমাদের গ্রামে গ্রামে দিলে খুব উপকার হতো।
উলিপুর পৌর এলাকায় সর্দার পাড়া এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ জানান, ৬ দিন থেকে টিকা নিতে এসে ঘুরে যাচ্ছি। একাধিক দিন কাগজ জমা নেয়া হলেও দুপুরের পর কাগজ ফেরত দেয়া হয়েছিল। তাই আজ আবার এসেছি। টিকা গুলো ওয়ার্ড পর্যায়ে না দিলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে দিলে জনগণের ভোগান্তি কমতো বলে মনে করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে টিকা গ্রহণ করলেও করোনার বিস্তার বেশি ঘটবে বলেও ধারণা তার।
তবে এত ভোগান্তি ছাপিয়ে যারা টিকা গ্রহণ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। প্রায় ৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিতে পেরেছেন পুলক রায়। তিনি বলেন, ‘আমার গতকাল টিকা গ্রহণের তারিখ ছিলো, গতকাল আমি এসে ভিড় দেখে ফিরে যাই। আজকে ভোগান্তি হলেও টিকা পেয়ে আমি খুশি। পাশাপাশি ভোগান্তি কমাতে টিকা প্রদানের ব্যবস্থাপনা উন্নত করার দাবি জানান তিনি।
এর আগে ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সের নাগরিকদের টিকা গ্রহণের অনুমতি থাকলেও এখন ১৮ বছরের ওপর সকল নাগরিকদের টিকা দেয়া হচ্ছে। এজন্য টিকা কেন্দ্র গুলোতে ভিড় আগের থেকে বেড়েছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের ১ম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৯৮ জন। এদের মধ্যে ২য় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৫১ হাজার ৭৭৯ জন এবং এখন পর্যন্ত টিকার জন্য মোট রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫২০ জন।
অপরদিকে কুড়িগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৪হাজার ৪১০ জন এবং মোট মৃত্যু ৫০ জন।
কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান বলেন, টিকা নিতে আসা মানুষদের ভোগান্তি কমাতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যে কেন্দ্র গুলোতে ভিড় বেশি সেগুলোতে উপকেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে। এটা আমরা ভেবে দেখছি। পাশাপাশি, টিকা প্রদান কার্যক্রমে আন্তরিকতার ত্রুটি হচ্ছেনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *