ওয়ালিউর রহমান রাজু , লালমনিরহাট\ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার একটি পল্লীতে ষড়যন্ত্রমুলক সাজানো মামলায় দীর্ঘ ১৩ মাস থেকে খবির উদ্দিন নামের এক শিক্ষক কারা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত শিক্ষকের পুত্র রইসুল ইসলাম ও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসি মহাপুলিশ পরিদর্শক এবং লালমনিরহাটের উর্তধন পুলিশ কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেও কোন সুফল পায়নি বলে জানা গেছে। গত সোমবার একদল সাংবাদিক সরেজমিনে গেলে অত্র উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের তালুক হরিদাস গ্রামের মৃতঃ ইসমাইল হোসেনের পুত্র রফিকুল ইসলাম ও শাহ আলমের স্ত্রী শামসুন্নাহার সহ অসংখ্য ব্যক্তি জানান ,ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ১৩/১০/১৮ ইং তারিখে খবির উদ্দিন মাষ্টারসহ আমরা বেশ কিছু মুসল্লী এক সাথে ফজর নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরছিলাম। এর কিছুক্ষন পর সকাল ৬টার সময় একই গ্রামের খালেক কারীর ৩ পুত্র অলিয়ার ,আতিকুল ও আল আমিন কাধে অস্র নিয়ে পুর্ব দিকে যাচ্ছিল। এর কিছক্ষন পরেই শুনতে পাই ওই গ্রামে জমাজমি সংক্রান্ বিরোধের জের ধরে ৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পরে থানা পুলিশ সকাল সোয়া ৯টার সময় এসে খবির মাষ্টারকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যাকারীদের বাড়ি দেখিয়ে দেয়ার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে খুনের সাথে জড়িত অলিয়ার , আতিকুল ও আল আমিনকে না পেয়ে পুলিশ খবির মাষ্টারকে গ্রেফতার করে বলে এলাকাবাসি জানায়। এ সময় লাল মিয়াসহ অসংখ্য মানুষ প্রতিবাদ করেন এবং তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য জোড় দাবি জানান। এদিকে হত্যাকান্ড সংগটিত স্থানে গেলে ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তি এলাকার মৃতঃ শমসের আলীর পুত্র নেওয়াজ আলম ,(৬০) মৃতঃ হাফিজ উদ্দিনের পুত্র হেলাল উদ্দিন (৬৫) , মৃতঃ আমিনুল হকের পুত্র নুরুজ্জামান(৩০) ও সিরাজ উদ্দিনের বিবাহীত কন্যা লাভলি সরকার সহ এলাকাবাসি বলেন , হত্যার সাথে জড়িত অলিয়ার গং এর সাথে নিহত জলিল, রব্বানী ও সহিদারদের জমা-জমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্দ চলে আসছিল। একপযার্য়ে তারা ১২/১০/১৮ইং দিবাগত রাতে ঐ বিরোধকৃত জমিতে একটি চালা তুলে রাত্রী যাপন করে। পরদিন সকালে অলিয়ার ও তার ৩ ভাই বিভিন্ন অস্রে-সজ্জে সজ্জিত হয়ে আকষ্বিকভাবে তাদের উপর আক্রমন করে কুপিয়ে হত্যা করে বলে তারা জানায়।প্রত্যক্ষদর্শি বৃদ্ধা জেলেখা বলেন , এই নৃশংস হত্যার সাথে অলিয়ারসহ তারা ৩ ভাই জড়িত এবং এর সাথে অন্য কেউ জড়িত নেই। এলাকাবাসি আরও জানায়, থানা পুলিশ সুষ্ট তদন্ত না করে এলাকায় গণ গ্রেফতারের চেষ্টা চালানোর কারনে বেশ কিছু দিন এলাকায় পুরুষ শুন্য ছিল। এছাড়াও হত্যা কান্ডের শিকার তাদের পরিবার এলাকার নিরীহ লোকজনকে অঞ্জাত নামা আসামীর অন্র্Íভুক্ত করার ভয় দেখিয়ে ভীত সন্ত্রষ্ট করে রাখে বলে এলাকাবাসি জানায়। এ কারনে বেশ কিছু ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে ছিল বলে জানিয়েছেন তারা। জানা গেছে , জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের তালুক হরিদাস গ্রামের খালেক কারীর পুত্র অলিয়ার গং এর সাথে একই উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউণিয়নের গিলা বাড়ি গ্রামের জলিল গংদের জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধের জের ধরে অলিয়ার গং তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ ব্যাপারে নিহতের পুত্র জাহাগীর আলম বাদি হয়ে ৭জনকে আসামী করে আদিতমারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৭ তাং ১৩/১০/১৮ ইং। এ মামলার মুল আসামীদের দীর্ঘ ১৩ মাসেও গ্রেফতার করতে পারেনি থানা পুলিশ। ওদিকে বাবাকে ষড়যন্ত্র মুলক হত্যা মামলার ৪ নং আসামী করায় খবির মাষ্টারের পুত্র রইসুল ইসলাম রনি সুষ্ট তদন্ত ও ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়ে গত ১/১০/১৯ ইং তারিখে মহাপুলিশ পরিদর্শক ঢাকা বরাবরে একটি আবেদন করেন। খবির মাষ্টারের স্ত্রী রওশন আরা শিউলি বলেন , অলিয়ার গংদের সাথে আমাদের ১৯৯১ সাল থেকে জমা-জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। আমার স্বামী একজন নিরপরাধ ব্যক্তি, তিনি এ ঘটনার সাথে কোন ক্রমেই জড়িত ছিলনা তাকে হয়রানী করার জন্য এই মামলায় আসামী করা হয়েছে এবং বিনা অপরাধে দীর্ঘ ১৩ মাস ধরে কারা ভোগ করছেন। তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন আমার স্বামী মাদ্রাসা যাওয়ার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছিল। এসময় পুলিশ এসে তাকে নিয়ে গ্রেফতার করে। এই ষড়যন্ত্রমুলক মামলার সুষ্ট ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে তার স্বামীর মুক্তির দাবী জানান। সারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধান গত সোমবার সাংবাদিকদের জানান , এই নৃশংস হত্যা কান্ড অলিয়ারসহ তারা ৩ ভাই সংগটিত করেছে। এ মামলার প্রকৃত আসামী ৩জন বাকীরা নিরপরাধ। বিষয়টি থানা পুলিশ সহ উর্তধন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আমিসহ এলাকার অনেকেই বলেছেন। কিন্তÍ কি কারনে নিরপরাধ ব্যক্তিরা এখনো মামলা থেকে রেহাই পেলনা তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন নীরবে নিভৃতে কাঁেদ ন্যায় বিচার।ঘটনার পাশের্ব বাড়ির মৃতঃ জোবেদ আলীর স্ত্রী সালমা বেওয়া সহ এলাকাবাসি সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করে বলেন, থানা পুলিশ এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে ঘটনাস্থলে কোন দিনই তদন্ত করতে আসেনি। পুলিশ সরেজমিন সুষ্ট ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে ৪ জন নিরপরাধ ব্যক্তি মামলায় ফঁাসত না। এলাকায় সাংবাদিক দল গেলে শত শত মানুষ মামলাটির সুষ্ট ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়সহ প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মামলার ১ নং স্বাক্ষী রমজান আলী মোবাইলে বলেন, এই মামলায় অলিয়ার ও তার ৩ ভাইসহ একজন ভাটিয়া জড়িত রয়েছে। মামলার বাদি জাহাগীরের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলা দায়ের হওয়ার পর তৎকালিন ওসি মাসুদ রানা স্বাক্ষীদেরকে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবান বন্দী রেকট করার কারনে এ মামলায় পুলিশের হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা ছিলনা।