আব্দুল হাকিম রাজ,মৌলভীবাজারঃ
মঙ্গলবার বেলা ২ ঘটিকা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারে বন্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ৩-৪ ফুট পানি জমে মানুষের জীবনযাত্রা কার্যত বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে।মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্তত ২০টি এলাকার শতাধিক বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এ জলাবদ্ধতার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার থেকে মৌলভীবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ থেমে থেমে বৃষ্টিতে শহরে মানুষের চলাচল অনেকটা কমে যায়। শহরের বাণিজ্যিক এলাকা ও পাড়া মহল্লায় পানি জমতে থাকে। প্রধান প্রধান সড়ক ও পাড়ামহল্লার সড়কগুলো চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। শহরের সার্কিট হাউস এলাকা, টিবি হাসপাতাল রোড, সৈয়ারপুর, কাশীনাথ রোড, সৈয়ারপুর স্কুল রোড, মাঝেরহাটি সড়ক, রিয়াছত উল্ল্যা সড়ক, পূর্ব গীর্জাপাড়া, সেন্ট্রাল রোড, গার্লস স্কুল রোড, শান্তিবাগ, পুরাতন হাসপাতাল রোড, সৈয়দ মুজতবা আলী সড়ক, গোবিন্দশ্রী, পশ্চিমবাজার, বড়হাট, শেখেরগাঁও, বেরিরচর, কাজিরগাঁও, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে গেছে। বিশেষ করে সেন্ট্রাল রোডের ম্যানেজার স্টলসহ পশ্চিমের সানফ্লাওয়ার স্টুডিও পর্যন্ত, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, পশ্চিমবাজারের চারদিক, এমবি ক্লথ স্টোরের সামনের রাস্তার কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ফুট পানি জমে গেছে। এসব স্থানে অনেকেই প্রাইভেট কার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ময়লা আবর্জনায় ভরাট ড্রেন ইত্যাদি কারণে পানি নিষ্কাষণ না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এদিকে সারা শহরের আশেপাশের প্রায় ২০টি এলাকার শতাধিক বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে ব্যবসার ক্ষতিসহ বাসাবাড়িতে বসবাসরত নাগরিকরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বাসায় পানি ওঠায় লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, কয়েক ঘন্টায় বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পানি নিষ্কাষণে বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে। পৌর কতৃপক্ষ যেসব স্থানে পানি আটকাচ্ছে সে সব স্থান পরিষ্কার করে পানি চলাচলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে টানা বৃষ্টিপাত এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কুলাউড়ার সাতটি ইউনিয়নে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। গুগালীছড়া, ফানাই, কাপুয়া, মনু নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মনু রেলব্রিজের বিপদ সীমার এক ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় কুলাউড়া শহরের সাথে কয়েকটি ইউনিয়নের যোগাযোগ বর্তমানে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিশেষ করে হাকালুকি হাওরের মানুষের বাড়িতে পানি ওঠায় মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছে লোকজন। শতাধিক মানুষের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম খুলেছে। জরুরিভাবে ত্রাণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বন্যায় প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শিমুল আহমদ জানান, অধিক বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে কুলাউড়া কয়েকটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।