রাণীশংকৈল প্রতিনিধি ঃ ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা কার্যালয়ে আগের তুলনায় সেবার মান বেড়েছে অনেক গুন বেশি। “ জনসেবার জন্য জন প্রশাসন ” শ্লোগানকে সামনে রেখে ভূমি সেবা প্রার্থীদের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় রাণীশংকৈল।
অফিসে প্রবেশ করতেই সামনে পড়বে একটি “সেবা গ্রহণে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে” আপনার এসি ল্যান্ড কে ডাকুন ” নির্দেশক একটি বেল। একটা সময় ছিল যখন অফিসার তাঁর রুমে বসে বেল চাপত আর বাহিরের অপেক্ষমান সেবা প্রার্থীরা একজন একজন করে সাক্ষাত পেত। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয় রাণীশংকৈল তার ব্যতিক্রম। প্রকৃত সেবার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে এখানে।
এখন থেকে প্রার্থীরাই বেল চাপবে এমন সময় অফিসার তাৎক্ষনিক তাদের কাছে ছুটে আসবেন। এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর সেবার মান বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভূমি সেবা প্রার্থীরা দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের সাহায্য ছাড়াই হয়রানি মুক্ত সেবা পাচ্ছেন।
অফিসে সিসি ক্যামেরা লাগানোর ফলে কোন দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী সেবা গ্রহিতাদের হয়রানি করার সুযোগ পাচ্ছেনা। ফলে সেবার মান আগের চেয়ে সেবার মান অনেক বেশি বেড়েছে। তাছাড়া প্রতি বুধবার ও বৃহস্পতিবার সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র কার্যালয়ে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানীতে সকল শ্রেণির সেবা প্রার্থীদের কথা মনযোগ সহকারে শোনা হয়। সেবার আলোকে দেওয়া হয় সমস্যার সমাধান। সকল সেবা এক স্থান থেকে পাওয়ার জন্য অফিসের সামনে স্থাপন করা হয়েছে সেবা টেবিল। ফলে সেবা গ্রহিতার বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরাঘুরি না করে এক স্থান থেক্ েসকল সেবা পাচ্ছেন। সেবা টেবিলের পাশেই রয়েছে একটি বক্স। সেখান থেকে অর্পিত, নামজারি,চান্দিনা ভিটি, খাস এবং হাজিরা সংক্রান্ত সকল ফরম বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিনামূল্যে ফরম বিতরণের ফলে সেবা গ্রহিতাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না।
অফিসের রেকর্ড রুম ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। আগে শুধু নামজারির রেকর্ডসমূহ বিন্যস্ত করা থাকলেও মিসকেস, পিও ৯৬ এবং খাস সংক্রান্ত নথি সমূহ সুবিন্যস্ত ছিল না। কিন্তু নথি পত্র ব্যবস্তাপনায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন মুহুর্তেই যে কোন নথি পাওয়া যায়। যার ফলে সেবা গ্রহণকারিদের হয়রানি দুর হওয়ায় বেড়েছে সেবার মান। জনমনে মিলেছে স্বস্তি। ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন গুচ্ছগ্রামের প্রস্বাব পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে দালালদের দৌরাত্ম কমে যাওয়ায় মিথ্যার অবসান ঘটেছে। সহকারি কমিশনার (ভূমি) সোহাগ চন্দ্র সাহার সোহাগী হস্তক্ষেপে কার্যালয়ের সুস্থ পরিবেশ ফিরে এসেছে। সেবার মান শতভাগ নিশ্চিত করতে তিদিন যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। বাস্তবতার আলোকে যোগ্যতার প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষ মানুষের জন্য, জনগণই সেবা পাওয়ার হকদার, প্রতিটি মানুষের দোর গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের বগলাডাঙ্গী হাটের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শিল্পী আসাদুল ও তার স্ত্রী শারীরিক প্রতিবন্ধি খাদিজা দম্পতির হাতে নিজের টাকায় কেনা জমির দলিল তুলে দেন সোহাগ চন্দ্র সাহা। অনতিবিলম্বে বাসযোগ্য ঘরবাড়ি নির্মানের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন তিনি। যা এই প্রতিবন্ধি দম্পতির বেঁচে থাকার স্বপ্নকে আশার আলোতে পরিণত করেছে।
উপজেলার কাশিপুর কারোলডোবা গ্রামের ভূদেব চন্দ্র সিংহ মুনসেফ আলীকে সমভাগে মোট ২৮ শতাংশ খাস জমি বুঝিয়ে দেন। এছাড়াও অফিস সুত্রে জানা যায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগে কমপক্ষে ১৫ জন ভূমিহীনকে খাস জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
রাণীশংকৈল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, প্রতিটি মানুষ যাতে করে সেবা পেতে পারেন সে কারনে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের প্রধান ফটকে সেবা টেবিল বসানো হয়েছে। সেখানে আমিও বসি সেবা নিতে আসা মানুষগুলোর সমস্যার কথা সরাসরি শুনে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান দিয়ে থাকি। উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিটি কার্যালয়ে সেবা ছাতা বসানো হয়েছে। এতে করে তৃণমুল পর্যায়ের মানুষ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এসে তাদের সেবা পেয়ে থাকেন। সেখানেও আমি নিজে বসে গণশুনানী পরিচালনা করে থাকি। এতে লোকজন আর্থিকভাবে লাভবান হয়। তাদের কম সময় লাগে, দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগিদের খপ্পরে না পড়ে হয়রানীর বেড়াজালে পড়ত হয়না। তৃণমুল পর্যায়ের সেবা গ্রহণকারিদের দোরগোড়ায় শতভাগ সেবা পৌঁছে দিয়ার মনমানসিকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সেবা নিতে আসা মানুষদের মুখে হাসি ফুটুক এ স্বপ্ন যেন জয় করতে পারি।
প্রতিটি মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে তিনি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।