লালমনিরহাট প্রতিনিধি :
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা’র তীরবর্তী শৌলমারী ও কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাটাতারের বেড়া দিয়ে যাতায়াত করেছেন। অনেক সময় কাটাতারে আটক হয়ে কাপড় ছিরে নষ্ট হচ্ছে। শুধু শিক্ষকরাই নন, ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাসহ শৌলমারী চরের মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এনিয়ে তারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। তিস্তা চরবাসি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। জানাগেছে, তিস্তা নদীতে শৌলমারী চরে গড়ে উঠে কালিকাপুর ও শৌলমারী সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যায়লের শিক্ষকরা উপজেলা শহর থেকে যায় চরে। কিন্তু বিদ্যালয়ের এক মাত্র যাওয়া রাস্তাটি কাঁটাতারে বন্ধ করে দিয়েছে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড। ফলে তারা কাঁটাতারে বেড়া দিয়ে শুয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। এই রাস্তা দিয়েই মূলত চরবাসীর যোগাযোগ উপজেলার মূল ভুখন্ডের সাথে। সরকারিভাবে প্রতিবছরই রাস্তাটি মেরামত করা হয় বলেও জানান স্থানীয়রা। সেই রাস্তাটিও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নামে ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড’ এর সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাঁটাতারে ঘিরে দখলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে যেসব লোকজন বাপ-দাদার আমল থেকে ওই রাস্তা দিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াত করছিলেন তাদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই।এতে করে চরের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। জানা যায়, শৌলমারী চরে শিক্ষার আলো জ্বালানোর দায়িত্বে যেসব শিক্ষক রয়েছেন তাদের প্রায় সবার বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের আশপাশে। প্রতিদিন স্কুলে যেতে প্রথমে নৌকা যোগে পরে দীর্ঘ পথ হেটেঁ শৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছতে হয় তাদের। কিন্তু নদীর ঘাট থেকে যে রাস্তাটি সরাসরি গিয়ে স্কুলে ঠেকেছে, সেটি আজ কাঁটাতারে বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে স্কুল যাতায়াত করতে হচ্ছে। শৌলমারী সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইতি মনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তা দিয়েই স্কুলে যাওয়া আসা করছি। এখন সেই রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় বাধ্য হয়েই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বেশ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। একজন নারী শিক্ষক হয়ে ওই কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে যাতায়াত কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো মুশকিল। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি। ওই স্কুলের আর এক সহকারি শিক্ষক সানিউর রহমান সানি জানান, ওই রাস্তাটি দিয়ে শুধু আমরা না স্কুলের শিক্ষার্থী আর অভিভাবকরাও যাতায়াত করেন। বর্তমানে সেটি কাঁটাতারে ঘেরা থাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি পথ ঘুরতে হয়। সেকারণে বাধ্য হয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করছি।
স্হানীয় চরবাসীরা জানায়, বন্ধ থাকা ওই রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মণ ফসল বিভিন্ন হাটে বাজারে যেত। আবার এলাকাবাসী চিকিৎসা, কেনাকাটার জন্যও ওই রাস্তা ব্যবহার করতো বাপ-দাদার আমল থেকে। কিন্তু সেই রাস্তা কাঁটাতারে ঘিরে রাখায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। স্থানীয় বাসীন্দা সেকান্ধার আলী বলেন, বছরের পর বছর চলাচল করার একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। রাস্তা বন্ধ করায় চলাচলের কোনো পথ নেই। সেকারণে আমরা লিখিতভাবে ঘটনাটি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এবিষয়ে
ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেন চৌধুরী কাঁটাতারে রাস্তা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অনেকবার রাস্তাটি ঠিক করে দিয়েছি। রাস্তা বন্ধ করে কাঁটাতার দেয়ার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ এলাকার মানুষজন খুবেই সমস্যায় পড়েছে। এনিয়ে অভিযোগ জানিয়েও প্রশাসন কিছুই করছেনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে ওই সোলার কোম্পানির কালীগঞ্জ অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা উত্তম রায় দাবি করে বলেন, তারা যে অভিযোগ করছে সেটি মিথ্যে। পাশ দিয়ে আরেকটি রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। যাতে তাদের কোন সমস্যা না হয়।
উল্লেখ্য, প্রায় চার বছর আগে ৩০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রংপুরের গঙ্গাচড়ায় স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে চুক্তি করেছিল ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে পরবর্তিতে ইন্ট্রাকোর শেয়ার কিনে নেয় প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জী লিমিটেড নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠান। সেটি গঙ্গাচড়ার তিস্তা নদীর উপড় নির্মাণ না করে স্থান পরির্বতনের আবেদন করে পার্শ্ববতি জেলা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৌলমারী চরে। সেখানে জমি কিনে কাঁটাতারে ঘিরে রেখেছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ঐ এলাকার সাধারন মানুষ।