কামরুল ইসলাম হৃদয়, চট্টগ্রাম অফিস:
দেশজুড়ে কালোজিরা ধান বিলুপ্তির পথে থাকলেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ধানটির চাষ বাড়ছে। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ধানের ফলন হয়েছে অনেক বেশি। অন্যান্য উচ্চফলনশীল ধানের সাথে বেড়েছে অনেকটা বিলুপ্ত প্রজাতির কালোজিরা ধানের চাষ। অন্যান্য ধান সোনালি বর্ণের হলেও এ ধানের রং হল কালো এবং ছোট মশলা জিরা আকৃতির। সে কারণে এ প্রজাতির ধানের নামকরণ করা হয়েছে কালোজিরা। এক সময় কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল কালো জিরা ধান। সর্বত্র চাষ হতো কালো জিরা ধান। গ্রামীণ জীবনে এই ধানটি ছিল অপরিহার্য। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই ধানের জায়গা দখল করে নিয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। এক সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সংরক্ষণ করা হতো কালো জিরা ধান। সুগন্ধি এ চালের নাম শুনলে জিভে জল আসে। এই সুগন্ধি চিকন চাল দিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানে তৈরি হয় পিঠাপুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ আরো সুস্বাদু মুখরোচক নানা ধরনের খাবার। বিভিন্ন পূজাপার্বণের ভোগ, মিষ্টান্ন রান্নার কাজে কালো জিরা চাল ব্যবহার করে। এ ধানের অত্যন্ত মিষ্টি সুগন্ধের জন্য প্রসিদ্ধ। ক্ষেতে কালোজিরা পাকলে এর মিষ্টি গন্ধে পুরো এলাকার বাতাস মৌ মৌ করে। ধানের রং কালো হলেও এর স্বাদ ভিন্ন। যার কারণে এ ধানের বাজার মূল্য অন্য ধানের চেয়ে তিন গুণ বেশি। ৮০ দশকে সাতকানিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে কালোজিরা ধানের ব্যাপক চাষ হলেও বেশ কয়েক যুগ ধরে প্রজাতিটি অনেকটা বিলুপ্ত প্রায়। বর্তমান বাজারে কালোজিরা প্রজাতির ধানের দাম অন্য ধানের তুলনায় বেশি থাকায় এবং আবহাওয়াবান্ধব হওয়ায় কৃষকরা পুনরায় কালোজিরা চাষের দিকে ঝুঁকছে। সাতকানিয়া কৃষি অফিসসূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে কালোজিরা ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হেক্টর। সরেজমিনে ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর জমিতে তারা পাইজাম, বিনা-৭, হাইব্রীড, ব্রি-৭২, ব্রি-৪১, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫২, বিআর-১১, বিআর-১০, বিআর-২২, বিআর-২৩, পাইজাম, বিনি জাতের ধানের সাথে কালোজিরা ধানের চাষ করেছেন। উপজেলার সোনাকানিয়া গারাংগিয়া গ্রামের কৃষকরা জানায়, তাদের ক্ষেতের কালোজিরা ধান পেকে গেছে, রোগ বালাই কম এবং ফলনও হয়েছে বেশি।তারা আরো বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির ধানের চাষের মধ্যে কালোজিরা ধানের ফলন সবার নজর কাড়ছে। এ ধানের বাজার মূল্য একটু বেশি চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। সাতকানিয়া উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম জহির জানান, আমন ধান রোপনের সময় কালোজিরা ধান রোপন করা হয়। কালোজিরা ধানের এ বছরের ফলন যথেষ্ট হয়েছে। বাজার মূল্য বেশি হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, আগের চেয়ে বর্তমানে এ ধানের বাজার দর অনেক বেশি। কৃষকরা যদি অন্যান্য ধানের মত কালোজিরা ধানের ব্যাপক চাষ শুরু করেন তাহলে অনেক বেশি লাভবান হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *