রনিকা বসু মাধুরী, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুজ্জামান খোকন ও ঘোরামী খালেকের বিরুদ্ধে ত্রানসহ নানা ধরনের দূর্নীতি নিয়ে লংকাকান্ড।
সম্প্রতি করোনা বিপর্যস্ত মূহুর্তে মানুষ কর্মহীন হয়ে অর্থনৈতিকভাবে খুবই দূর্বল হয়ে পড়েছে।এমনতাবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রানসামগ্রী পাঠিয়েছে অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য। কিন্তু কিছু দূর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের জন্য আজ এই অসহায় মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুজ্জামান খোকন মেম্বার দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় নানা ধরনের অনিয়ম, দূর্নীতি, ত্রান লুটপাট, চোরাকাবারিসহ স্বেচ্ছাচারী অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে স্থানীয় এমপিকে ও আওয়ামী লীগকে না জানিয়ে তিনিসহ তার সকল কুকর্মের সহযোগী ঘোরামি খালেক কে নিয়ে এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হতে শুরু করে বড়সহ সকল ব্যবসায়ীদের নিকট হতে ত্রানের নামে জোরর্পূবক চাঁদা আদায় করে এলাকার জনগনকে সুষম বণ্টন না করে সিংহভাগ অর্থ ও মালামাল আত্মসাৎ করে। স্থানীয় জনগন ও আওয়ামী লীগ নেতার্কমীদের কাছ থেকেও এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
বিষয়টি এমপি মহোদয় অবগত হলে তিনি সাথে সাথে দুইটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘোরামী খালেক পাঁচ বছর পূর্বে যে এলাকার মানুষের ঘরের চাল তৈরি (ঘোরামী) কাজ করতো মাত্র পাঁচ বছরে সে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। সরকারী অনুদান সহ বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও টেন্ডারের দালালী করা এবং অবৈধ ব্যবসায়ী হতে উৎকোচ আদায়, জনগনকে পুলিশি ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় সহ একাধিক অপকর্মের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়।
সম্প্রতি স্থানীয় একজন দরিদ্র সংখ্যালঘু শ্রী চন্ডিদাশের সরকারি বরাদ্দকৃত ঘর দিতে ঘোরামী খালেকে ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। চন্ডি টাকা না দেওয়ায় তাকে বঞ্চিত করে। সে ঘর না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে হার্ড এটাকে অসুস্থ হয়ে ইসলামী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। যার ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
এমন কি স্থানীয় এমপির দেওয়া ত্রান সামগ্রী রাতের অন্ধকারে নির্বাচনী এলাকার বাহিরে পাচারের তথ্য পাওয়া যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা এক ভ্যান চালক পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারা যায়, করোনায় বাইকে কাজ করতে যেতে না পারায় তারা না খেয়ে দিন পার করছে। এমতাবস্থায় খোকন মেম্বার, খালেক সহ তার সহযোগীরা এসে দুই বস্তা খাবার হাতে দিয়ে নিজেদের ছবি তুলে পরবর্তীতে সেই খাবার ফিরিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয় আরও একাধিক জন বলেন, গতবছর রেসন কার্ড দিবে বলে তার ভোটার আই ডি কার্ডের ফটোকপি নিয়েছে। অথচ স্থানীয় এক ডিলারের কাছ থেকে সেই লোক কিছু দিন আগে জানতে পারে, তার রেসন কার্ড হয়েছে অথচ তারা চাউল পায়না। এছাড়া কাপরের ব্যবসার আড়ালে তিনি র্দীঘদিন থেকে চোরাকারবারের সাথে জড়িত। একাজে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী তার সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মারাত্মক অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নিষেয়াজ্ঞা সত্ত্বেও বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তিনি অনুষ্ঠানের নামে চাঁদাবাজি করেন। বিশেষ করে মুজিববর্ষেও তার নিজেস্ব বাহিনী দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগের পাওয়া গেছে। তথ্য যাচায়ে এধরনের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
উল্লেখ্য যে চাঁদাবাজির নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী হিসাবে ঘোরামী খালেকের নাম প্রকাশ করে স্থানীয় জনৈক আওয়ামীলীগ নেতা।
আনিসুজ্জামান খোকন মেম্বার, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর হতে তার রাজনৈতিক উত্থান এবং সে সময় থেকে বর্তমান অবধি পর্যন্ত তার অন্যায়-অত্যাচার, দূর্নীতির চলে আসছে। বিএনপি আমলে তিনি কালিগঞ্জ থানায় বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলেন। তার ফেসবুক টাইম লাইনে বিএনপি নেতা ও এমপিদের অনেক পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যায়।
সম্প্রতি স্থানীয় টুটুল নামে এক যুবক ফেসবুক লাইভে এসে (৮-০৫-২০২০) তারিখ, আনিসুজ্জামান খোকন ও ঘোরামী খালেকের বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, এমপি মহোদয়ের ও আওয়ামী লীগকে বাইপাচ করে জোরপূর্বক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা চেয়ে চাঁদা উঠানো, ত্রান আত্মোসাৎ, চিকিৎসার কথা বলে ঘন ঘন ভারত সফরের নামে বিভিন্ন ধরনের চোরাকারবারি, সমাজে বিচার-সালিশের নামে মানুষকে নাজেহাল সহ, প্রশাসন, কোর্ট ও থানায় দালালির মাধ্যমে অসহায় নিরীহ মানুষকে নানা ধরনের হয়রানির তথ্য তুলে ধরে। এরপর হতেই উক্ত দূর্নীতিবাজরা টুটুলকে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি দেখানো, পুলিশ প্রশাসন নিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি- ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। ইতি মধ্যে কালিগঞ্জ থানার একজন অফিসার কে প্রভাবিত করে তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করেছে এই দূর্নীতিবাজরা।
এদিকে এমপি মহোদয় করোনা পরিস্থিতি সহ ঢাকাতে নানান ব্যস্ততার কারণে এলাকার বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে পারছেন না। সমস্ত বিষয়ে খোকন মেম্বারের সাথে একবার ফোনে যোগাযোগ করা গেলেও সে সমস্ত বিষয়ে কথা না বলে ফোন কেটে দেয় এবং পরবর্তীতে অনেকবার ফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
বিগত ১০ বছর আগে তার বিরুদ্ধে ব্যাংক ঋন খেলাপির অভিযোগ রয়েছে। অথচ বর্তমানে নলতাতে তার আনুমানিক ১.৫০ কোটি মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। আর নামে- বেনামে আনুমানিক প্রায় কয়েক কোটি টাকার সম্পদ তার রয়েছে। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দলের প্রতিতার তার কোন রকমের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ নেই। যারফলে নিবেদিত প্রাণ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী উদবিগ্ন হয়ে পরেছেন।
বর্তমানে এলাকায় নিরীহ মানুষ তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ ভয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না। এলাকার নিরীহ-ভূক্তভোগী জনগণ দূর্নীতিদমন ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ সহ দ্রুত তাদের হাত থেকে পরিত্রান চায়।