বিশেষ প্রতিবেদনঃ
অতিরিক্ত পাথর বোঝাই ট্রাক পারাপারের কারনে হুমকির মুখে পড়েছে ঐতিহাসিক সোনাহাট রেলসেতু। যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে বৃটিশ শাসনামলে নির্মিত দেশের অন্যতম তৃতীয় বৃহৎ ঐতিহাসিক সোনাহাট রেলসেতু দিয়ে প্রতিদিন ২০-২৫ টনের অধিক পাথর বোঝাই শত শত ট্রাক পারাপারের কারনে হুমকির মুখে পড়েছে সেতুটি। কয়েকদিন থেকে ব্রীজটির স্লিপার ভাঙ্গার পরেও আবারও তা জোড়াতালি দিয়েই অতিরিক্ত পাথর বোঝাই ট্রাক পারাপার অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে যেকোন মুহুর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনাসহ প্রায় ৩ লক্ষাধিক জনসাধারণের যাতায়াত বন্ধ সহ প্রান হানীর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
জানাগেছে কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তবর্তী ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট,বলদিয়া,চরভুরুঙ্গামারী,আন্ধারীঝাড় ও তিলাই ,নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা,কেদার,বল্লভেরখাস এবং নারায়ণপুর ইউনিয়নের সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার যোগাযোগ রক্ষায় দুধকুমর নদের উপর সোনাহাট রেলসেতু একমাত্র যোগাযোগের পথ। যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। ১৮৭৯ সালে তৎকালীন নর্দান বেঙ্গল রেলওয়ে বেঙ্গল ও আসামের সঙ্গে যোগাযোগ সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পাইকেরছড়া ইউনিয়নে দুধকুমর নদের উপর সোনাহাট রেলসেতু নামে একটি সেতু নির্মাণ করে। বৃটিশ শাসনামল শেষে ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির পর সেতুটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক-হানাদার বাহিনী যাতে নদী পাড় হতে না পারে সেজন্য সেতুর ২ টি স্লিপার পার্ট ভারতীয় সেনারা ডিনামাইন দিয়ে উড়িয়ে দেয়। জাতীয় পার্টির আমলে কুড়িগ্রাম-১ আসনের সাবেক এমপি মরহুর শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও তৎকালীন ভুরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক গভর্ণর মরহুম শামসুল হক চৌধুরীর ঐকান্তিক চেষ্টায় স্টিলের স্লিপার দ্বারা সোনাহাট রেলসেতুটি মেরামত করে জনসাধারণের যাতায়াতের সুযোগ করে দেয়া হয়। সোনাহাট রেলসেতু মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেতুটির আয়ুষ্কাল ১০০ বছর বেঁধে দেয়া হয় যা ইতিমধ্যে সেতুটির মেয়াদত্তীর্ণ হয়েছে। বিএনপি সরকারের আমলে সেতুটির তীর রক্ষা বাধে হাজার হাজার টন পাথর নিলামে বিক্রি করায় সেতুটির সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে হুমকির পড়ায় বর্তমানে ২৫ কুড়িগ্রাম-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এ,কে,এম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক এমপি কর্তৃক নদীবাঁধ দিয়ে সেতুটি রক্ষা পায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুটিকে ঝুঁকিপুর্ন চিহ্নিত করে ১০ টনের অধিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা সত্বেও সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ২০-২৫ টনের অধিক পাথর নিয়ে পারাপার হওয়ায় সেতুটির বিভিন্ন অংশে দেবে গেছে এবং ফাটল দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক ট্রাক পারাপারের সময় ভুমিকম্পের ন্যায় বিকট শব্দ ও কাপুনিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে পথচারী ও হাল্কা যানবাহন চালকদের। দেশের অন্যতম তৃতীয় বৃহত্তম সোনাহাট রেলসেতুটি রক্ষার জন্য ইতিপুর্বে কয়েকদফা মানববন্ধন ও অবরোধ করেও কোন সুফল পায়নি এলাকাবাসী। গতকয়েকদিন থেকে অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই ট্রাক পারাপারের সময় সেতুটির স্লিপার সরে যাওয়ার কারনে শতশত ট্রাক আটকা পরলেও কোন রকম জোড়াতালি দিয়েই আবারও চলছে ট্রাক পারাপার। ঢাকা থেকে পাথর নিতে আসা ট্রাক ড্রাইভার জসীম মিয়াকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান তার ট্রাকে ২২ টন পাথর নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পাথর নিয়ে সেতু পারাপার নিষিদ্ধ সত্বেও কেন তিনি নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি আরও জানান,সকলে ২৫ থেকে ২৭টন পাথর নিয়ে পারাপার হতে পারেন তার নিলে ক্ষতি কি? যেকোন মুহুর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে পাইকেরছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার জানান,সড়ক বিভাগ ১০টনের অধিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ সাইনবোর্ড লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ। অতিরিক্ত বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রনে নেই কোন সরকারী ব্যবস্থা। জরুরী ভিত্তিতে অতিরিক্ত বোঝাই ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকারীভাবে নিয়ন্ত্রন না করলে যেকোন মুহুর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনা সহ দুধকুমর নদের পুর্ব পাড়ের প্রায় ৩ লক্ষাধিক জনসাধারনের যাতায়াতের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বরকত মোঃ খুরশীদ আলম বলেন সোনাহাট রেলসেতুটির উপর দিয়ে অতিরিক্ত পাথর বোঝাই ট্রাক যাতায়াতের বিষয়টি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বরে উপজেলা চেয়ারম্যান,নির্বাহী অফিসার ও স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী সহ সিএন্ড এফ এজেন্টদের নিয়ে মিটিং করে অতিরিক্ত পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও কিছু দিন পরে আবারও পুর্বের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সোনাহাট রেলসেতুটি রক্ষা এবং অতিরিক্ত পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধের জন্য শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *